প্রধানমন্ত্রিত্ব এবং মাতৃত্ব
ইলিয়াস হোসেন
🕐 ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২০, ২০১৯
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতার স্বাদ এবং একজন নারীর সর্বোচ্চ আকাক্সিক্ষত ‘মাতৃত্বে’র স্বাদ একই সঙ্গে আস্বাদন করেছেন দুজন মাত্র নারী। পৃথিবীর হাজার হাজার রেকর্ডের ভিড়ে এটি নিশ্চয়ই আলাদা তাৎপর্য বহন করে। এই দুই নারীর একজন হলেন, পাকিস্তানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো, যিনি প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। অন্যজন হলেন, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্ন।
বেনজির ভুট্টোর ঘটনাটি ১৯৯০ সালের, অর্থাৎ এখন থেকে প্রায় ৩০ বছর আগের কথা। দীর্ঘ বিরতির পর জাসিন্ডা আর্ডার্ন যেন পৃথিবীকে আরেকবার চমকে দিলেন। ২০১৮ সালের ২১ জুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়ে বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিলেন। সন্তান জন্মদানের খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান আর্ডার্ন নিজেই। তিনি অকল্যান্ডের হাসপাতালের কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানান। বিবৃতিতে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্লার্ক ও আমি খুবই উচ্ছ্বসিত। আমাদের দলের সদস্য সংখ্যা দুই থেকে তিনে দাঁড়িয়েছে। আমি নিশ্চিত নতুন বাবা-মায়েদের যে রকম আবেগ ছুঁয়ে যায়, আমাদেরও সে রকমই লাগছে। বহু মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি, সে জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’ জাসিন্ডা আর্ডার্ন হচ্ছেন দ্বিতীয় সরকারপ্রধান যিনি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় সন্তানের মা হলেন।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ৩৭ বছর বয়সে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। মিস আর্ডার্নের সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার ছয় মাস আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি সন্তানসম্ভাবা। ছয় সপ্তাহের মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েছিলেন এবং তার সহকারীর কাছে সাময়িক সময়ের জন্য দায়িত্ব হস্তান্তর করেছিলেন।
একটি জায়গায় বেনজির ভুট্টোকেও ছাড়িয়ে গেছেন আর্ডার্ন। কন্যাসন্তান আরোহার জন্মের তিন মাসের মধ্যেই জাতিসংঘ ৭৩তম অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। মার কোলে চড়ে জাতিসংঘ অধিবেশনে সবার নজর কাড়েন আরোহা। জাতিসংঘ অধিবেশনে এই প্রথম কোনো শিশুকে দেখা গেল। শুধু তাই নয়, জাসিন্ডা আর্ডার্ন প্রথম ব্যক্তি, যিনি শিশুসন্তান নিয়ে অধিবেশনে যোগ দেন। ভাষণের আগে তিন মাস বয়সী মেয়ে আরোহার সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য আদর দুষ্টুমিতে মেতে ছিলেন জাসিন্ডা। ভাষণ দেওয়ার সময় তার সঙ্গী ক্লার্ক গেফোর্ড মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা জানান, শিশু আরোহা এখন মায়ের দুধ খায়, তাই আন্তর্জাতিক এই সফরে তাকে সঙ্গে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। অন্য দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মায়ের বৈঠকের সময়ও বাবার যত্নে ছিল সে।
তবে কোলের শিশু হলে কী হবে, জাতিসংঘে প্রবেশের জন্য নিয়মকানুন মেনে আরোহার জন্য পরিচয়পত্র ইস্যু করতে হয়েছে। বাবা গেফোর্ড মেয়ের ছবি লাগানো জাতিসংঘের পরিচয়পত্রের ছবি এবং মেয়েকে নিয়ে মজার অভিজ্ঞতা টুইটারে দিয়ে লিখেছেন, ‘সবাই আরোহার জাতিসংঘের পরিচয়পত্র দেখতে চেয়েছে। এটিই সেটি। আহা, অধিবেশনে আরোহার ন্যাপি পাল্টানোর মাঝামাঝি সময়ে সম্মেলন কক্ষে প্রবেশ করা জাপানের প্রতিনিধি দলের অবাক হওয়া চাহনির ছবি যদি তুলতে পারতাম!