পথ দেখানো নারী লেখক
নারী জাগরণের লেখক
রোকেয়া ডেস্ক
🕐 ১২:৪৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯
গত শতাব্দী থেকে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব শিক্ষিত মানুষের কাছে পরিচিত ও গ্রহণযোগ্য নাম বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে তিনি অনন্য নারী ব্যক্তিত্ব।
বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত তিনি। লেখালেখি, সাংগঠনিক কর্মকা-, নারী উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা ইত্যাদি কর্মের মাধ্যমে তিনি নিজেই একজন প্রতিষ্ঠান-ঊনবিংশ শতকের বিস্ময়!
ড. আবদুল মান্নান সৈয়দ বলেছেন, ‘চিন্তায়, চেতনায়, কর্মে নারী জাগরণে তথা বাংলার নবজাগরণে তার ভূমিকা দ্বিতীয় রহিত। আধ্যাত্মিকতার স্থলে ঐচ্ছিকতা, গড্ডলের স্থলে ব্যক্তিকতা, ভাবালুতার স্থলে ভাবুকতা, আবেগের স্থলে যুক্তিশীলতা, প্রশ্নহীন সমর্থনের স্থলে জিজ্ঞাসু বিবেচনা-পুনর্বিবেচনা, বিমূর্ত কল্পনার স্থলে যুক্তিশীলতা, প্রশ্নহীন সমর্থনের স্থলে মনস্বিতা ও তার সকর্মক প্রয়োগ বেগম রোকেয়া রেনেসাঁসের এসব চরিত্র লক্ষণ অসম্ভব উজ্জীবিত।’
রোকেয়া শৈশবে বড় দুই ভাই এবং বড় বোনের কাছে লেখাপড়া শেখার সুযোগ পান। বাবা-মা দুজনেই ছিলেন শিক্ষাবিরোধী, সংস্কারাচ্ছন্ন ও অবরোধ সমর্থক। বাবার অপব্যয় বিলাসী জীবনযাপনে জমিদারি অবস্থাও খারাপ হয়ে পড়ে। বাড়িতে রোকেয়ার একাকী নিঃসঙ্গ জীবনে মায়ের কাছে ধর্ম ও গার্হস্থ্য শিক্ষার সুযোগ ঘটে। গভীর রাতে সবাই ঘুমালে চুপি চুপি বিছানা ছেড়ে মোমবাতির আলোতে বড় ভাইয়ের কাছে ইংরেজি ও বাংলা শিখতেন রোকেয়া। এ থেকেই রোকেয়ার শিক্ষার ব্রতীটি লক্ষ করা যায়।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে রোকেয়ার বিয়ে হয় ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে।
বিয়ের পর তিনি ‘বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ নামে পরিচিত হন। ১৯০২ সালে পিপাসা নামে একটি বাংলা গল্পের মধ্য দিয়ে তিনি সাহিত্য জগতে পদার্পণ করেন। স্কুল প্রতিষ্ঠা ছিল রোকেয়ার একটি আন্দোলন। কেননা শিক্ষাকে তিনি নারীর শারীরিক ও মানসিক শক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
নিজের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না, হয়েছিল বাল্যবিয়ের শিকার-এসব নিয়ে তিনি আজীবন মনে মনে পোষণ করছেন ক্ষোভ। তিনি লিখেছেন ‘শৈশবে বাপের আদর পাইনি, বিবাহিত জীবনে কেবল স্বামীর রোগের সেবা করেছি। প্রত্যহ ইউরিন পরীক্ষা করেছি, পথ্য রেঁধেছি, ডাক্তারকে চিঠি লিখেছি। দুবার মা হয়েছিলুম তাদেরও প্রাণভরে কোলে নিতে পারিনি। একজন ৫ মাস বয়সে, অপরটি ৪ মাস বয়সে চলে গেছে। আর এই ২২ বৎসর যাবৎ বৈধব্যের আগুনে পুড়ছি।’
কিন্তু গড়পড়তা মানুষ আর তার মধ্যে ফারাকটা তো ওই খানেই। জীবনের এ বিরুদ্ধবাদী আচরণে তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আর সেই ক্ষোভের আগুন দেশের, নারীদের উন্নয়নে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।
নারী জাগরণের লক্ষ্যে লিখেছেন বিস্তর। উপন্যাস, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ সব মাধ্যমেই নারী জাগরণে অভূতপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তার চরিত সুলতানা’স ড্রিম’নারী জাগরণ তো বটেই, সাহিত্যের একটি বিরাট অবদান রূপে পৃথিবীময় স্বীকৃতি পেয়েছে।