পথ দেখানো নারী লেখক
কবি ও কবিমাতা
রোকেয়া ডেস্ক
🕐 ১২:৩২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯
‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।’ কবি কুসুমকুমারী দাশের এ কবিতা পড়েনি এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। কুসুমকুমারী দাশের পিতা চন্দ্রনাথ দাশও কবিতা লিখতেন। তাই জন্মসূত্রেই তিনি পেয়েছিলেন লেখার ক্ষমতা। অবাক করার মতো বিষয় হলো, তার সন্তান জীবনানন্দ দাশও বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রভাবশালী কবি। ছোটবেলা থেকেই কুসুমকুমারী দাশের কবিতা নিয়মিতভাবে ছাপা হতে থাকে।
মুকুল, ব্রাহ্মবাদী, প্রবাসী ইত্যাদি পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হতো। বিভিন্ন পত্রিকা কবির বাসায় আসত। মুকুল পত্রিকায় লিখতেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লিখতেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর মতো মনীষীরা। কুসুমকুমারী দাশ কলকাতার বিখ্যাত বেথুন স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৮৯৪ সালে তিনি যখন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তখন তার বয়স ছিল ১৯। স্বামীর নাম ছিল সত্যানন্দ দাশ।
কুসুমকুমারী দাশ শুধু যে একজন কবি ছিলেন তা নয়। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। নিপুণভাবে গৃহকর্ম সম্পন্ন করার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজ করতেন। পাশাপাশি চালাতেন লেখালেখি। কুসুমকুমারী দাশের গ্রন্থগুলোর মধ্যে কিছু হলো কাব্যকুমারী, পৌরাণিক আখ্যায়িকা, কুসুমকুমারী দাশের কবিতা এবং দৈনন্দিন দিনলিপি। এসব লেখায় তার মুনশিয়ানা সহজেই চোখে পড়ে। তার কবিতায় বারবার এসেছে ধর্ম, নীতিবোধ, দেশাত্মবোধ। কাব্য মুকুল (১৮৯৬) তার কাব্যগ্রন্থ। ‘পৌরাণিক আখ্যায়িকা’ গদ্যগ্রন্থ।
সংসারের জাঁতাকলে পিষ্ট হতে হতে জীবনানন্দের মা কবিতার লেখার বেশির সময় পাননি। অবশ্য পরিবারটি ছিল আলোকিত, পরিবারের লোকজন কাব্য চর্চার মর্ম ঠিকই বোঝাতো, তবে নারী বিশাল যৌথ পরিবারে ঘানি না-টেনে কাব্য চর্চা করছে, এমন চিত্র পুরুষশাসিত সমাজে যে আজও অকল্পনীয়। তবু তিনি তার কাব্যচর্চা এবং অন্যান্য লেখালেখি চালিয়ে গিয়েছেন। ১৯৪৮ সালে কলকাতার রাসবিহারী এভিনিউতে বাংলার এ কবি এবং কবিমাতা কুসুমকুমারী দাশ মৃত্যুবরণ করেন।