অগ্রন্থিত
ভাষণ
খোলা কাগজ ডেস্ক
🕐 ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৮
১৯২৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম বঙ্গীয় নারী শিক্ষা সম্মেলনে প্রদত্ত সভাপতির ভাষণের সংক্ষিপ্ত অংশ
মাননীয় উপস্থিত ভগিনীবৃন্দ!
আপনারা আমার ন্যায় তুচ্ছ নগন্য ব্যক্তিকে এ সময়ের জন্য সভানেত্রী পদে বরণ করিয়া আমার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করিয়াছেন, তজ্জন্য আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিতেছি। কিন্তু আমি অবশ্যই বলিব যে, আপনাদের বির্ব্বাচন ঠিক হয় নাই। কারণ আমি আজীবন কঠোর সামাজিক ‘‘পর্দ্দার’’ অত্যাচারে লোহার সিন্দুকে বন্ধ আছি- ভালরূপে সমাজে মিশিতে পাই নাই-এমনকি সভানেত্রীকে হাসিতে হয়, না কাঁদিতে হয়, তাহাও আমি জানি না। সুতরাং আমার ভাষায় অনেক ভুল-ভ্রান্তি থাকিবে তজ্জন্য আপনারা প্রস্তুত থাকুন।
স্ত্রীশিক্ষার কথা বলিতে গেলেই আমাদের সামাজিক অবস্থার আলোচনা অনিবার্য্য হইয়া পড়ে। আর সামাজিক অবস্থায় কথা বলিতে গেলে, নারীর প্রতি মুসলমান ভ্রাতৃবৃন্দের অবহেলা, ঔদাস্য এবং অনুদার ব্যবহারের প্রতি কটাক্ষপাত অনিবার্য্য হয়। প্রবাদ আছে, ‘বলিতে আপন দুঃখ পরনিন্দা হয়।’
নারী ও পুরুষ বিরাট সমাজ-দেহের দুইটি বিভিন্ন অংশ। বহুকাল হইতে পুরুষ নারীকে প্রতারণা করিয়া আসিতেছে, আর নারী কেবল নীরবে সহ্য করিয়া আসিতেছে। পুরুষের পক্ষে নারায়ণী সেনা আছেন বলিয়া তাহারা এ যাবৎ নারীর উপর জয়লাভ করিয়া আসিতেছে। সুখের বিষয়, এত কাল পরে ‘শ্রীকৃষ্ণ’ স্বয়ং আমার হিন্দু ভগিনীদের প্রতি কৃপাকটাক্ষপাত করিয়াছেন। তাই চারিদিকে হিন্দু সমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অবরোধ-নন্দিনী মহিলাদের মধ্যে জাগরণের সাড়া পড়িয়া গিয়াছে।
তাহার, বিশেষতঃ মাদ্রাজের মহিলাবৃন্দ সর্ব্ব-বিষয়ে উন্নতির পথে অগ্রসর হইয়াছেন। এবার মাদ্রাজের লেজিস্লেটিভ কাউন্সিলের ডেপুটি প্রেসিডেন্টের পদে একজন মহিলা নির্ব্বাচিত হইয়াছেন। সম্প্রতি রেঙ্গুনে একজন ব্যারিস্টার হইয়াছেন। লেডী ব্যারিস্টার মিস ঘোরাবজীর নামও সুপরিচিত; কিন্তু মুসলিম নারীর কথা কি বলিব?-তাহারা যে তিমিরে সে তিমিরে আছে।
সম্প্রতি তুরস্ক এবং মিসর, ইউরোপ ও আমেরিকার ন্যায় পুত্র ও কন্যাকে সমভাবে শিক্ষা দিবার জন্য বাধ্যতামূলক আইন করিয়াছেন। কিন্তু তুরস্ক আমেরিকার পদাঙ্ক অনুসরণে সোজা পথ অবলম্বন করেন নাই; বরং আমাদের ধর্ম্ম-শাস্ত্রেও একটি অলঙ্ঘনীয় আদেশ পলন করিয়াছেন। যেহেতু পৃথিবীতে যিনি সর্ব্বপ্রথমে পুরুষ স্ত্রীলোককে সমভাবে সুশিক্ষা দান করা কর্ত্তব্য বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়াছেন, তিনি আমাদের রসুল মকবুল (অর্থাৎ পয়গাম্বর সাহেব)।
তিনি আদেশ করিয়াছেন যে, শিক্ষালাভ করা সমস্ত নরনারীর অবশ্য কর্ত্তব্য। তের শত বৎসর পূর্ব্বেই আমাদের জন্য এই শিক্ষাদানের বাধ্যতামূলক আইন পাশ হইয়া গিয়াছে। কিন্তু আমাদের সমাজে তাহা পালন করে নাই, পরন্তু ঐ আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করিয়াছে এবং তদ্রুপ বিরুদ্ধচারণকেই বংশ-গৌরব মনে করিতেছে।
এখনও আমার সম্মুখে আমাদের স্কুলের কয়েকটি ছাত্রীর অভিভাবকের পত্র মজুত আছে-যাহাতে তাহারা লিখিয়াছেন যে, তাহাদের মেয়েদের যেন সামান্য উর্দ্দু ও কোরান শরীফ পাঠ ছাড়া আর কিছু- বিশেষতঃ ইংরেজি শিক্ষা দেওয়া না হয়। এই ত আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা।