ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শেষ দিনগুলো...

খোলা কাগজ ডেস্ক
🕐 ৯:৪৯ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৮

পঞ্চাশোর্ধ্ব তারামন বিবি ঘুম থেকে উঠতেন ভোর ৫টায়। কখনোবা তারও আগে। ফজরের নামাজ আদায় করে ছেলের বউকে সঙ্গে নিয়ে শুরু হতো গৃহস্থালি কাজকর্ম। নিজের কাজ নিজে করতে পছন্দ করতেন তিনি। চুলা জ্বালাবার পর বাড়ির সবার জন্য ভাত রান্না করা হয়। ভাতের সঙ্গে সবসময়ই আলু ভর্তা, কখনো আগের রাতের তরকারি, আবার মুরগির ডিম থাকে। ছেলেটা রুটি পছন্দ করে তাই মাঝেমধ্যে রুটি, চা, ডিম দিয়ে নাশতা করতেন তারামন বিবি। দুটি গাই গরু। তার নিজের নাশতা করার আগে গরুগুলোকে বিচালি খেতে দিতেন।

সকালের নাশতা শেষ করে দুপুরের রান্নার আয়োজন শুরু হতো। দুপুরে একটু ভালো খাবার পছন্দ করেন তারামন বিবি। দুপুরের খাবার মেন্যুতে মসুরের ডাল থাকবেই। তার সঙ্গে যে কোনো তরকারি। গরুর মাংস, মুরগির মাংস, খিচুড়ি তার প্রিয় খাবার। দুপুরের খাবারের পর তারামন স্বভাবসুলভ বিশ্রাম নিতে চাইলেও পারেন না।

গ্রামের প্রয়োজনে, মানুষের প্রয়োজনে তাকে যেতে হয় এর ওর বাড়িতে। কারও সংসারে ঝগড়া বিবাদ হয়েছে সেখানে তারামন বিবিকে দরকার। বিচার সালিশ করতে হবে। দোষী ব্যক্তির শাস্তি দিতে হবে। গ্রামের মানুষ ভীষণ সহজ-সরল। ওরা তারামনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত মেনে নেন।

সন্ধ্যার আগে চা-নাশতা করতে পছন্দ করেন তিনি। বেশ কড়া লিকারের দুধ চা পছন্দ তার। টেলিভিশন দেখতে খুব ভালো লাগে তারামন বিবির। টেলিভিশনের সব অনুষ্ঠান দেখেন না, তবে বিটিভির সাপ্তাহিক নাটক, আর প্রতিদিন সংবাদ দেখেন তিনি। গান শুনতে ভীষণ পছন্দ করেন তারামন বিবি। পছন্দের শীর্ষ তালিকায় রয়েছেন সাবিনা ইয়াসমীন, রুনা লায়লা, সৈয়দ আব্দুল হাদী। দেশের গানের ক্যাসেট সংগ্রহ করতেন।

ধানের চাষ করেন তারামন বিবির স্বামী আব্দুল মজিদ। নিজেদের কিছু আর আদি নিয়ে প্রতি সিজনে ত্রিশ, পঁয়ত্রিশ মণ ধান ওঠে ঘরে। সেগুলো নিয়েই বছর শেষ হয়ে যায়। মেয়ের জামাইকে চাকরি নিয়ে দিয়েছেন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে। ছেলের হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়ের চাকরি।

এছাড়া সরকারের কাছ থেকে ভাতা পান। এগুলো দিয়েই সংসার চলত তার। নাতি আশিষকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন তারামন বিবির। আশিষ এক দিন অনেক বেশি বেতনের চাকরি করবে। আর ওদের কারও জীবনে তখন কোনো কষ্ট থাকবে না।

 
Electronic Paper