বিংশ শতকের ‘জীবক’ অসীমা
মেহেদি হাসান
🕐 ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৮, ২০১৮
গৌতমবুদ্ধের চিকিৎসক জীবকের শিক্ষা সমাপ্ত হলে গুরু তাকে বললেন এমন একটা গাছ খুঁজে আন যা মানুষের কোনো কাজে লাগে না। জীবক দিন শেষে ফিরেছিলেন খালি হাতে। রসায়নবিদ অসীমা চট্টোপাধ্যায় সেই জীবকের উত্তরসূরি। তিনি প্রচলিত ভেষজের রস থেকে চিনে নিতে চেয়েছিলেন কোন গাছের পদার্থগুণে কোন রোগ উপশমের ক্ষমতা তৈরি হয়। জৈব রসায়নবিদ অসীমা চট্টোপাধ্যায়। একজন বাঙালি। উপমহাদেশের এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। ১৯১৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জন্ম। পিতা ডাক্তার ইন্দ্রনারায়ণ মুখোপাধ্যায়, মাতা কমলা দেবী।
১৯৩২ সালে বেথুন কলেজিয়েট স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস। এখান থেকেই দুই বছর পরে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। দুটি পরীক্ষাতেই তিনি সম্মানসূচক বৃত্তি লাভ করলেন। তাছাড়াও পেলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আবদুল লতিফ ও ফাদার লাফোর বৃত্তি এবং হেমপ্রভা বসু স্মারক পদক।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বার সময় তার কাছে সব বিষয়ের দরজা খোলা ছিল। সবকিছুর মাঝে থেকে তিনি স্বেচ্ছায় রসায়নবিদ্যা নিজের পাঠ্য বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেন। শৈশবে পিতার হাত ধরে বিভিন্ন উদ্ভিদের গুণাগুণ সম্বন্ধে যেসব কথা তার মনে দাগ কেটে যায়, তিনি ভেবেছিলেন রসায়নবিদ্যায় জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে উদ্ভিদের সেসব ভেষজ গুণ সম্বন্ধে আরও অনেক নতুন তথ্য তিনি আবিষ্কার করতে সক্ষম হবেন।
রসায়নে পড়বার সময় তখনকার নিয়মেই তার গবেষণায় হাতেখড়ি হয়েছিল অধ্যাপক প্রফুল্ল কুমার বসুর কাছে। গবেষণা জীবনের প্রায় শুরুতেই তিনি পেয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগমায়া দেবী স্বর্ণপদক (১৯৪০), নাগার্জুন পুরস্কার (১৯৪২) ও প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ উপাধি। এরপর ১৯৪৪ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিএসসি অর্জন করেন। ১৯৪৭-৫০-এ তিন বছর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যালটেক এবং সুইজারল্যান্ডের জুরিখে উচ্চতর গবেষণার জন্যে যান। ক্যালটেকে থাকার সময় তিনি দুবার নোবেল পুরস্কার জয়ী রসায়নবিদ লিনাস পলিং-এর সাহচর্য লাভ করেছিলেন। আমৃত্যু তাদের মধ্যে সেই ঘনিষ্ঠতা বজায় ছিল। জুরিখে তিনি নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী পল কারেরের সঙ্গেও কাজ করেছিলেন।
১৯৪৫ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন আরেক প্রখ্যাত রসায়নবিদ বরদানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। গবেষণাকার্যে অসীমা চট্টোপাধ্যায়ের মূল অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন মূলত তিনিই। তাদের কন্যা জুলি, তিনি নিজেও একজন জৈব রসায়ন বিজ্ঞানী। জামাতা অভিজিৎও ছিলেন তার সময়ের অন্যতম রসায়নবিদ। সে জন্য অনেকেই এ পরিবারকে ‘ক্যুরি ফ্যামিলি অব ইন্ডিয়া’ আখ্যা দিয়ে থাকেন।