ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রুলিবালায় সচ্ছলতা

সুকুমল কুমার
🕐 ৯:২১ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৮, ২০১৮

নওগাঁর রানীনগরে রনসিঙ্গার গ্রামে পিতল দিয়ে তৈরি হচ্ছে রুলিবালা। আর এই রুলিবালা তৈরি করে গৃহবধূ সুচরিতাসহ আরও অনেক নারীরা সংসারে নিয়ে এসেছেন সচ্ছলতা।তিন বছর আগেও সাংসারিক কাজের পাশাপাশি প্রতিবেশীদের সঙ্গে গল্প করে সময় পার করতেন তারা। আর এখন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাতুড়ি ও ছোট ছোট ছেনি দিয়ে পিতল থেকে তৈরি রুলিবালায় নানা ধরনের কারুকার্য ফুটাতে ব্যস্ত থাকেন। সুচরিতা প্রতিদিন পাঁচ জোড়া রুলিবালা তৈরি করে ২০০ টাকা মজুরি পান।

এ কাজ করে যে আয় করেন তা দিয়ে গত দুই বছর থেকে মাসে ২ হাজার টাকার মুদারাবা মাসিক কিস্তি (ডিপিএস) খুলেছেন। মেয়ে মোছা. সুমাইয়া গ্রামের স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশুনা করাচ্ছেন। স্বামী এনামুল সরদার স’ মিলে কাজ করেন। ফলে দুজনের উপার্জনে সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে রনসিঙ্গার গ্রামের এ দম্পত্তির।

নওগাঁর রানীনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নে এ গ্রাম রনসিঙ্গার। এ গ্রামের সাবেক সেনাসদস্য মো. এমদাদুল হক গড়ে তুলেছেন রুলিবালার কারখানা।
কারখানাটির নাম রেখেছেন ‘এমদাদ বালা ঘর’। এ গ্রামটি এখন কারিগর গ্রাম নামে পরিচিত পেয়েছে। এ গ্রামের প্রায় ১৫০ জন নারী রুলিবালার কাজ করেন। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাজ করে সংসারে সচ্ছলতা নিয়ে এসেছেন দরিদ্র পরিবারের এসব গৃহবধূরা। এ ছাড়া উপজেলার খট্টেশ্বর, পশ্চিম বালুভরা, রানীনগর বাজারসহ বিভিন্ন গ্রামে আরও প্রায় শতাধিক নারীরা কাজ করে থাকেন।

পিতল দিয়ে তৈরি হয় রুলিবালা। পিতলের রং এবং সোনার রং প্রায় সমান। স্বর্ণের দাম বেশি হওয়ায় সবার পক্ষে অলঙ্কারের স্বাদ গ্রহণ করাও সম্ভব হয় না। রুলিবালাতে কারুকার্য তৈরি করে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়। ফলে পছন্দের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ক্রেতাদের। আর এ কাজ এলাকার বেকার নারীদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় এসব রুলিবালা এখন সরবরাহ করা হচ্ছে।

রনসিঙ্গার গ্রামের গৃহবধূ মোছা. হাসনাহেনা বলেন, রুলিবালার ওপর নকশা করতে গ্রামেই ২০ দিনের একটা প্রশিক্ষণ নিই। চার বছর ধরে এ কাজ করছি। এখানকার প্রতিটি বাড়িতে রুলিবালা তৈরি করা হয়। আগে গল্প করে এ গ্রামের নারীরা সময় পার করলেও এখন সবাই রুলিবালা তৈরিতে ব্যস্ত। কারোই যেন অবসর নেই।

প্রতিদিন প্রায় ১৫০-২০০ টাকা পারিশ্রমিক পান এ কাজ করে। এখন বাচ্চাদের নিয়ে একটু ভালোভাবে খেয়ে-পরে দিন কাটাতে পারছি।

রুলিবালা কারখানার মালিক মো. এমদাদুল হক বলেন, ২৩ বছর সেনাবাহিনীতে চাকরির পর ২০১৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর নাটোর, সৈয়দপুর ও পাবর্তীপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় প্রায় ছয় মাস রুলিবালা তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ২০১৪ সালে স্ত্রী রুমাকে রুলিবালার কাজ শেখান। এরপর বাড়িতে ১০ জন নারী শ্রমিক দিয়ে কারখানায় কাজ শুরু করেন। সাধ্যের মধ্যে হওয়ায় সবার কাছেই পছন্দ রুলিবালা।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে এ উপজেলায় প্রায় ৩৫০ জন নারী কারিগর রুলিবালার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার কারখানায় কাজ করে ১৮৫ জন নারী শ্রমিক। কাজের মান ভেদে নারী শ্রমিকদের ৮-৯ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়।

এ ছাড়া প্রতি জোড়া ভেদে ৭০-৮০ টাকা করেও মজুরি দেওয়া হয়। রুলিবালা বাজারে বিক্রি হয় রং ছাড়া ১৫০-১৬০ টাকা এবং রংসহ বিক্রি হয় ২৫০-৩০০ টাকা জোড়া। এসব রুলিবালা ঢাকার তাঁতী বাজার, সিলেট, বগুড়া, নাটোর ও নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অনেকে নিয়ে থাকেন।

 
Electronic Paper