ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শুধুই পেটের ভাবনা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
🕐 ১:০২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮

২০ বছর আগে সাতবর্গ বেদে পল্লীতে এসেছিলেন দীপালি বেদেনী। কয়েক বছর পর ভোটের তালিকায় নাম ওঠে তার। এরপর জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে দেশে অনুষ্ঠিত সবকটি নির্বাচনে ভোট দিয়ে আসছেন তিনি।

দীপালির মতো সাতবর্গ বেদে পল্লীর আরও অনেকেই ভোটার হয়েছেন। সংখ্যার হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তি ইউনিয়নের সাতবর্গ গ্রামের স্থায়ী বেদে পল্লীটিতে এখন ভোটার রয়েছেন দুই শতাধিকেরও বেশি। সংখ্যায় কম হলেও ভোটের সময় কদর বাড়ে অবহেলিত এ সম্প্রদায়ের মানুষের। গত শুক্রবার বিকালে বেদে পল্লীতে দীপালি বেদেনীর সঙ্গে ভোট নিয়ে কথা হয়। সুনির্দিষ্ট কোনো ভাবনা না থাকলেও ভোট যে তার নাগরিক অধিকার সে বিষয়টি খেয়ালে আছে তার। তাই তো ভোটের দিন কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

দীপালি বলেন, ৩০ তারিখ যে ভোট সেটাও জানি না। কেউ তো এখনো পর্যন্ত ভোট চাইতে আসেনি, তাই জানি না। সবসময় ভোটের এক-দুই দিন আগে এসে ভোট চায় প্রার্থীরা। এবারও হয়তো এক-দুই দিন আগে আসবে ভোট চাইতে। যে ভালো তাকেই ভোট দেব।


তিনি বলেন, ভোটের সময় প্রার্থীরা আমাদের জন্য অনেক কিছুই করবে বলে কথা দেয়।

পরে আর তারা আসে না, আমরাও তাদের কাছে যাই না কিছু চাইতে। আমরা রাজনীতি বুঝি না, বুঝি শুধু পেটনীতি। সারা দিন কাজ করে দুই মুঠো খেতে পারলেই আমাদের শান্তি। কে ক্ষমতায় এলো-গেল সেটা নিয়ে আমাদের চিন্তা নেই। স্বামী-সন্তান নিয়ে শান্তিতে বাঁচলেই হলো।

৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাতবর্গ গ্রামের পূর্বপাড়ার একটি খোলা জায়গায় ‘খুপড়ি’ ঘর করে বসবাস করছেন বেদে সম্প্রদায়ের কয়েকশ মানুষ। সাপ ধরে সেই সাপের খেলা দেখানোই তাদের জীবন ও জীবিকা। জন্মসূত্রে বাংলাদেশি হয়েও সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে অবহেলিত এ সম্প্রদায়ের মানুষ। বেদে সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য নেই আলাদা কোনো কবরস্থান। তাই এ সম্প্রদায়ের কেউ মারা গেলে বিপাকে পড়তে হয় তাদের।

এ পল্লীর বৃদ্ধ জয়নব বেদেনী জানান, কে ভোটে দাঁড়িয়েছে সেটাই জানি না। ভোটের কয়েক দিন আগে প্রার্থীরা আমাদের এখানে আসে। আমাদের জন্য এটা-সেটা করবে বলে কথা দেয়। আমরাও ভোট দেই কিন্তু পরে আর তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না।

আরেক বৃদ্ধ জহিরুল ইসলাম জানান, এখনো পর্যন্ত কোনো প্রার্থী আমাদের এখানে আসেনি। আমাদের সমাজে রাজনীতির তেমন প্রভাব নেই। ভোটের সময় হলে ভোট দেই। আমরা শুধু শান্তিতে থাকতে চাই। সাপের খেলা দেখানোর পাশাপাশি সমাজের অন্য মানুষের মতো কাজকর্ম করে চলতে চাই। সরকার যেন আমাদের সেই সুযোগ করে দেয় সেটাই একমাত্র দাবি।

বেদে পল্লীর সর্দার বাচ্চু মিয়া বলেন, আমরা সমাজের অবহেলিত মানুষ। দেশ ডিজিটাল হলেও আমরা সেই সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারছি না। আমাদের রাস্তাঘাটে সমস্যা, মসজিদ-কবরস্থান নেই। কেউ মারা গেলে দাফন করতেও সমস্যা হয়।

আমরা এ অবহেলিত সমাজ থেকে উন্নতির দিকে যেতে চাই। সমাজে অন্যরা যেভাবে মর্যাদা নিয়ে বসবাস করছে আমরাও সেভাবে বসবাস করতে চাই। আমাদের দিকে যে সুনজর দেবে আমরা তাকেই ভোট দেব।

 

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper