ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাংলায় দুর্গাপূজা

আবু বকর সিদ্দীক
🕐 ১:৩০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৭, ২০১৮

হিন্দু ধর্ম বা সনাতন ধর্মের সূচনা এক দিনে নয়। এ ধর্মের আচার আচরণও কোনো একজন অবতারের মাধ্যমে এ মর্তে আবির্ভূত হয়নি। যুগে যুগে নানা অবতারের মাধ্যমে ধর্ম আজকের রূপ লাভ করেছে। তাই দুর্গাপূজার সূচনা ঠিক কবে থেকে তা বলা কঠিন এবং গবেষণার বিষয়।

তবে ভারতবর্ষে বিশেষ করে বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিম বঙ্গে যে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হয় তা হিন্দু ধর্মের প্রাচীন রূপ নয়। আদিতে এটি বাসন্তী পূজা হিসেবে পালিত হতো। বসন্তকালে অর্থাৎ চৈত্র মাসে এটি উদযাপিত হতো। এ বাংলায় প্রাচীনকালে এক গাঁ থেকে অন্য গাঁয়ের যোগাযোগ ভালো ছিল না। সে তুলনায় বসন্তকালে যোগাযোগ ব্যবস্থাটা অপেক্ষাকৃত ভালো ছিল। যদিও কৃষকের ঘরে তত দিনে অভাব হানা দিত।

কারণ হেমন্তের ফসল শীত পেরিয়ে বসন্তেও প্রান্তিক চাষিদের ঘরে অবশিষ্ট থাকতো না। তবুও না শীত না গরমের সেই আবহাওয়ায় মানুষ ভালোভাবেই বাসন্তী উৎসব পালন করতেন, করতেন তা আনন্দের সঙ্গে। ইংরেজ শাসনামলে এ দেশে যখন ধর্মীয় সংস্কার শুরু হলো, হিন্দু ধর্মীয় নেতারা যখন এগুলো নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন তখন রামের অকাল বোধনের শারদ উৎসবে নতুন প্রাণ পেল।

অপশক্তি রাবণকে বধ করার জন্য রাম তার বাহিনী নিয়ে লঙ্কা আক্রমণ করেন। এ কাজে তার সারথী ছিল হনুমানের নেতৃত্বে বানর বাহিনী। যুদ্ধ অভিযানের প্রাক্কালে রাম অকালে দেবী দুর্গার বন্দনা করেছিলেন বাংলায় শরৎকালে। আর তাই কালক্রমে শারদীয় দুর্গোৎসব হয়ে ওঠে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব। যদিও গ্রাম বাংলায় এ সময়ে বর্ষার অবশেষ থেকেই যায়, যদিও যোগাযোগ ব্যবস্থা তখনো বিচ্ছিন্ন থাকে গ্রামে, তবুও প্রাণের এ উৎসবকে ম্লান করে এমন শক্তি কার!

এক সময় শুধু জমিদারবাড়িতে দুর্গাপূজা হতো, তারপর তা একটু সম্ভ্রান্ত পরিবারে প্রবেশ করে। কিন্তু কালক্রমে তা সমাজের সব স্তরে বিকশিত হয়। এখন শুধু জমিদারবাড়িতে নয়, প্রায় সব গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। এখন সাধারণ মানুষ চাঁদা তুলে এ উৎসবে শামিল হয়।

দুর্গাপূজা নিঃসন্দেহে ধর্মীয় পূজা, কিন্তু এর একটি সার্বজনীন রূপ আছে। সমাজের সব বর্ণের মানুষ এতে অংশ নেন। উৎসবের আমেজ লাগে সমাজের সব শ্রেণির মানুষের জীবনে। নতুন পোশাকে ওঠে সবার গায়ে, বাড়িতে বাড়িতে কুটুমের আগমন ঘটে। এমনকি ভিন্নধর্মাবলম্বী মানুষও এ পূজা দর্শনে যান। আমন্ত্রিত হন প্রতিবেশী হিন্দু সমাজের স্বজনদের দ্বারা। এখানে ধর্মীয় উন্মাদনা নেই, কোনো উগ্রতা নেই। একটি প্রশান্ত সামাজিক অনুভূতি কাজ করে। সহাবস্থানের এক অনবদ্য রূপ পরিলক্ষিত হয়।
পূজা হয়, তার আশপাশে বসে মেলা। সেখানে আগমন ঘটে সব ধর্মে, সব বর্ণের মানুষের। এ সমাবেশের যে রূপ তার শৈল্পিক, তা মানবতার, তা অসাম্প্রদায়িক। দুর্গার আবির্ভাব তাই সবার কাছে স্পষ্ট। আরতির ঢোলের আওয়াজ তাই ভক্তদের বিরক্তির সৃষ্টি করে না, বরং মনোমুগ্ধকর এক আবহের সৃষ্টি করে।

ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটেছিল অপশক্তির প্রতিভূ অসুরকে বধ করার জন্য। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের প্রত্যয়ই হলো দুর্গাপূজার প্রধান উপজীব্য বিষয়। আর এটিই সবার প্রত্যয়। সমাজের সব বিবেকবান মানুষ চেষ্টা করেন দুষ্টের দমন করতে আর শিষ্টের পালন করতে। তাহলে এ পূজার প্রধান বাণী নিশ্চয় সবার অন্তরের কথা, তাই অনেক বেশি সার্বজনীন। দুর্গা অসুরকে বধ করেছিলেন, অপশক্তির বিনাশ ঘটিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাকেও ক্ষমা করেছিলেন। শুধু ক্ষমাই করেননি, স্থান দিয়েছিলেন তার পবিত্র পাদদেশে। আজও তাই দুর্গার ভক্তরা তাদের দেবীর পাশিপাশি অসুরকেও পূজার অর্ঘ নিবেদন করেন। ক্ষমার কী অপূর্ব নিদর্শন!

দেবী দুর্গার পায়ের কাছে অসুরের অবস্থান আমাদের চিন্তায় যদি প্রভাব না ফেলে তবে কীভাবে আমাদের চেতনার বিকাশ ঘটবে! ধর্মে যে উগ্রতা নেই, ধর্মান্ধতা যে পাপ তা তো এ থেকেই উপলদ্ধি করতে হবে। সমাজের সব ধর্মের, সব বর্ণের মানুষের মধ্যে সহাবস্থানের যে আবেদন, অসাম্প্রদায়িক চিন্তার যে বিকাশ, তা দুর্গাপূজার সার্বজনীন রূপ বলেই প্রতীয়মান হয়। এক অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠা, বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে তাই শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলেই অনেকে বিশ্বাস করেন। সনাতন ধর্মমতে এবার দুর্গার আগমন ঘোটকে এবং প্রস্থান দোলায়। এটি দুর্যোগ আর হানাহানির লক্ষণ। পৃথিবীর নানা প্রান্ত আজ বিক্ষুব্ধ, অস্থিরতা বিরাজ করছে। তাই আজ সবার প্রার্থনা পৃথিবী শান্তিময় হয়ে উঠুক।

 

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper