ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মনোবৃত্তির অনুসরণ জঘন্যতম পরিণাম : ইসলামী দৃষ্টিকোণ

মনোবৃত্তি অনুসরণ করার মৌলিক কারণসমূহ

(পর্ব-২)

প্রফেসর ড. সৈয়দ মাকসুদুর রহমান
🕐 ৮:৫২ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১

মনোবৃত্তি অনুসরণ করার মৌলিক কারণসমূহ

দুর্নীতির কারণ
মানুষের স্বাভাবিক আকর্ষণ যে কোনো নিষিদ্ধ বস্তুর ওপর। এ ক্ষেত্রে তাকে নিমন্ত্রণ করা সম্ভব শুধুমাত্র বিধান ও শাসন দ্বারা। অন্যদিকে আল্লাহ তা’আলার একান্ত অনুগ্রহ দ্বারা। সুতরাং মনোবৃত্তি তাকে অপরাধের দিকে ধাবিত করে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন- আর যদি সত্য তাদের কামনা-বাসনার অনুগামী হতো, তবে আসমানসমূহ, জমিন ও এতদভয়ের মধ্যস্থিত সব কিছু বিপর্যস্ত হয়ে যেত; বরং আমি তাদেরকে দিয়েছি তাদের উপদেশবাণী (কুরআন)। অথচ তারা তাদের উপদেশ হতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

সঠিক পথ থেকে বিভ্রান্তির কারণ

নিজের আত্মার অনুসরণ করার কারণে সে সঠিক পথটি হারিয়ে ফেলে যার কারণে সে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, অবশ্য আমি ইচ্ছা করলে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিতাম সে সকল নিদর্শনসমূহের দৌলতে। কিন্তু সে যে অধঃপতিত এবং নিজের রিপুর অনুগামী হয়ে রইল। সুতরাং তার অবস্থা হলো কুকুরের মতো; যদি তাকে তাড়া কর তবুও হাঁপাবে আর যদি ছেড়ে দাও তবুও হাঁপাবে। এ হলো সেসব লোকের উদাহরণ; যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার নিদর্শনসমূহকে। অতএব, আপনি বিবৃত করুন এসব কাহিনি, যাতে তারা চিন্তা করে।

চিন্তার বৈপরীত্যের কারণ

চিন্তার বৈপরীত্যের কারণ সে আত্মার অনুসরণ করে যার জন্য সে আল্লাহ তা’আলার করুণা থেকে দূরে সরে যায়। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন- ‘এবং তোমার পালনকর্তার করুণার প্রত্যাশায় অপেক্ষমাণ থাকাকালে যদি কোনো সময় তাদেরকে বিমুখ করতে হয়, তখন তাদের সঙ্গে নম্রভাবে কথা বলো।’

মতানৈক্যের কারণে

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম। যাদেরকে ধর্মগ্রন্থসমূহ দেওয়া হয়েছে তাদের কাছে জ্ঞান বা কোরআন আসার পর তারা শত্রুতা ও হিংসা ছাড়া অন্য কোনো কারণে এর সত্যতার ব্যাপারে মতভেদ করেনি। যে আল্লাহর নিদর্শনগুলো অবিশ্বাস করে তার মনে রাখা উচিত আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।’ (৩:১৯)

মিথ্যার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাওয়া

মানুষ তার মনোবৃত্তি অনুসরণ করার জন্য অধিক মাত্রায় মিথ্যার প্রতি ঝুকে পড়ে। অবশেষে এই মিথ্যা তাকে ধ্বংস করে দেয়। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন- ‘(হে রাসূল) অতঃপর ওরা যদি তোমার আহ্বানে সাড়া না দেয়, তাহলে জানবে ওরা কেবল নিজেদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করে। আল্লাহর পথ নির্দেশ অমান্য করে যে ব্যক্তি নিজ খেয়াল খুশির অনুসরণ করে তার অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত আর কে? আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।’ (২৮:৫০)

অহংকার করে আত্মার অনুসরণ করা

আত্মার অনুসরণ করলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে তার অহংকার। আর অহংকারই যে কোনো ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, তারা অন্যায় ও অহংকার করে নিদর্শনাবলিকে প্রত্যাখ্যান করল, যদিও তাদের অন্তর এগুলো সত্য বলে বিশ্বাস করেছিল। অতএব দেখুন, অনর্থকারীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল? আমি আমার নিদর্শনসমূহ থেকে তাদেরকে ফিরিয়ে রাখি, যারা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে গর্ব করে। যদি তারা সমস্ত নিদর্শন প্রত্যক্ষ করে ফেলে, তবুও তা বিশ্বাস করবে না। আর যদি হেদায়েতের পথ দেখে, তবে সে পথ গ্রহণ করে না। অথচ গোমরাহীর পথ দেখলে তাই গ্রহণ করে নেয়। এর কারণ, তারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলে মনে করেছে এবং তা থেকে বেখবর রয়ে গেছে। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, যার অন্তরে সামান্যতম অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।

সত্য গ্রহণ না করার মানসিকতা

অর্থ: হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, অতএব, তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজত্ব করো এবং খেয়াল খুশির অনুসরণ করো না। তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি। এর কারণ হলো, তারা হিসাব দিবসকে ভুলে যায়।

আত্মার প্রতি জুলুম করা

সম্মানিতকে অপমান করার জন্য একমাত্র আত্মার অনুসরণ করা ব্যক্তি সম্মানিত মানুষকে অসম্মান করে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন- ‘আমি তো আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি। তাদের স্থলভাগে ও সমুদ্রে চলাচলের জন্য বাহন দান করেছি। তাদের ভালো ও পবিত্র জীবনোপকরণ দান করেছি এবং আমার সৃষ্টির বেশিরভাগের ওপর তাদের শ্রেষ্ঠ মর্যাদা দান করেছি।’ (১৭:৭০)

বিদআত প্রতিষ্ঠিত করার কারণে

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শূকরের মাংস, যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়, যা কণ্ঠ রোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উচ্চ স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যায়, যা শিং এর আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে, কিন্তু যাকে তোমরা জবেহ করেছ। যে জন্তু যজ্ঞবেদীতে জবেহ করা হয় এবং যা ভাগ্য নির্ধারক শর দ্বারা বণ্টন করা হয়। এসব গোনাহর কাজ। আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীন থেকে নিরাশ হয়ে গেছে। অতএব তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় করো। আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। অতএব যে ব্যক্তি তীব্র ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে; কিন্তু কোনো গোনাহর প্রতি প্রবণতা না থাকে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল।

লেখক
প্রফেসর ড. সৈয়দ মাকসুদুর রহমান
চেয়ারম্যান, আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ।

 
Electronic Paper