ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রমজানের শিক্ষা বছরব্যাপী জারি রাখার তাগিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:১৫ পূর্বাহ্ণ, মে ১২, ২০২১

রমজানের শিক্ষা বছরব্যাপী জারি রাখার তাগিদ

নশ্বর পৃথিবীর মোহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অবিনশ্বর আখেরাতের প্রতি ধাবিত করার মাস রমজানুল মুবারকের আজ ২৯তম দিবস। আজ বা কাল রমজান আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেবে। নিয়মানুবর্তিতার এ বিশেষ মাস আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে বান্দার জন্য এক বিশেষ উপহার। রমজান মুমিন জীবনে তাকওয়া, একাগ্রচিত্তে অধিক ইবাদত, ত্যাগ, সংযম, ধৈর্য, দান-সদকা সাহায্য-সহমর্মিতা, পরিশীলিত জীবনাচরণ আদর্শ চরিত্র গঠন, নিয়মানুবর্তিতা ইত্যাদি মৌলিক গুণের শিক্ষা দেয়। রমজানে মানবজীবনের প্রয়োজনীয় প্রায় সব ফেরেশতাসুলভ স্বভাবের সমন্বয় ঘটে।

রোজাদার রমজানের ইবাদত-বন্দেগির মধ্যে সব অন্যায়-অত্যাচার, অশ্লীলতা-অনাচার, বেহায়াপনা-ব্যভিচার, মিথ্যাচার পাপাচার ও যাবতীয় অকল্যাণকর কর্মকা- থেকে বিরত হয়ে সংযম সাধনার পথ ধরে আল্লাহ পাকের কাছে আত্মসমর্পণের শিক্ষা পায়। সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ক্ষুধা-পিপাসা সহ্য করে ইফতার, দীর্ঘ সময় নিয়ে তারবিহ, তাহাজ্জুদ ইত্যাদির ভেতর দিয়ে রোজাদার মাহে রমজানে প্রশিক্ষিত হতে থাকে। মুমিন বান্দা যদি মাহে রমজানে চর্চিত সেসব শিক্ষা বাকি ১১ মাস জারি রাখতে পারে, তবে তার ইহকালীন ও পরকালীন জীবন সফল হবে।

মাহে রমজানের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো তাকওয়া বা খোদাভীতির শিক্ষা। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন করে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। তাকওয়া অর্জন সম্ভবত তোমরা করতে পারো। (সুরা বাকারা: ১৮৩) কোরআনে পাকের এ আয়াত স্পষ্ট করে দিয়েছে, রোজাদার যদি তার আদায়কৃত রোজার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনে সফল না হয়, তবে রোজার এ কষ্ট-ক্লেশ ব্যর্থ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এমন অনেক রোজাদার আছে, যার রোজা কেবল ক্ষুধার্ত থাকার নামান্তর। আর এমন অনেক রাত জেগে ইবাদতকারী আছে, যাদের ইবাদত কেবল রাত জাগার নামান্তর।’ (মুসনাদে আহমদ : ৯৬৮৩)

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সব ধরনের নাফরমানি থেকে দূরে থাকার নাম তাকওয়া। আল্লাহর কাছে বান্দার মান মর্যাদার পরিমাপক হচ্ছে তাকওয়া। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে ব্যক্তি যে মুকি তথ্য তাকওয়াবান।’ (সুরা হুজরাত : ১৩) রোজাদার একমাত্র আল্লাহভীতি বা তাকওয়ার ভিত্তিতেই রোজা পালন করে। লোক দেখানোর জন্য বা কারও কাছে থেকে বাহবা হাসিলের জন্য নয়। মাহে রমজানের এ শিক্ষাকে আমাদের সারা বছর জারি রাখতে হবে। যে আল্লাহ পাকের ভয়ে আমরা রমজানে দিনের বেলা পানাহারসহ অন্যান্য অনেক কাজ থেকে বিরত থাকি, আমাদের মনে রাখতে হবে, সেই আল্লাহ পাকের পরিবেষ্টনের বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। যেখানেই অন্যায় করি না কেন, আল্লাহ অবশ্যই দেখছেন। পৃথিবীর সবাইকে ফাঁকি দেওয়া গেলেও তাঁকে ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব। ব্যবসা বাণিজ্য, চাকরি, লেনদেনসহ সবক্ষেত্রে এ অনুভূতি জাগ্রত না হলে রমজানের রোজা আমাদের কোনো কাজে আসবে না।

অন্যদিকে মাহে রমজানে মুমিন বান্দা অধিক ইবাদত বন্দেগি করে থাকেন। ফরজ রোজার পাশাপাশি তারাবিহ, তাহাজ্জুদ, দুআ-দরুদ, তাসবিহ-তাহলিল, দান-সদকা তেলাওয়াত, তওবা-ইস্তেগফার ইত্যাদি ইবাদতের আধিক্য দেখা যায় এ মাসে। এজন্য এ মাসকে ইবাদতের মৌসুমও বলা হয়। রমজান পরবর্তী বাকি মাসগুলোতে এ রকম অধিক ইবাদতের চর্চা অব্যাহত রাখা জরুরি। শাওয়ালের ৬টি রোজা, প্রতি মাসে আইয়ামে বিজের রোজাসহ নফল রোজার অনুশীলন জারি রাখা ইমানি দাবি। পাশাপাশি নফল নামাজ, তেলাওয়াতে কোরআন, তওবা-ইস্তেগফারসহ যাবতীয় কল্যাণকর আমল রমজান পরবর্তী ১১ মাসে চালু রাখতে পারলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ সুন্দর হবে কোনো সন্দেহ নেই। ব্যক্তি জীবনের সব মলের নূর পরিবার ও সমাজকে আলোকিত করবে।

এছাড়া রমজান আমাদের সংযমের শিক্ষা দেয়। আমরা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও না খেয়ে থাকি, মিথ্যাকে বর্জন করি। নিজের নফসকে শাসন করার গুণ আমরা রমজানে শিক্ষা লাভ করি। মাহে রমজান আমাদের দুঃখীজনের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়, সৃষ্টি জগতের প্রতি সহমর্মী, সহযোগী হতে শিখায়। ক্ষুধা-পিপাসার কষ্ট কেমন তার অনুভূতি রোজা রাখার মাধ্যমে অনুভূত হয়। গরিব-মিসকিনদের প্রায় সারা বছর যে কষ্টে জীবনযাপন করতে হয়, সে জগৎ সম্পর্কে সব মুমিন জ্ঞান লাভ করেন। তাই রমজানে তাদের পাশে দাঁড়ানোর সে অভ্যাস বাকি ১১ মাস চালু রাখলে সমাজে অসাম্য বা বৈষম্য থাকবে না। সেজন্য রমজানের পারস্পরিক স্নেহ-ভালোবাসা, মায়া-মমতা, আন্তরিকতা, দানশীলতা, উদারতা, ক্ষমা, পরোপকারিতার শিক্ষা সব সময়ের জন্য চালু রাখা আবশ্যক।

অন্যদিকে মাহে রমজান আমাদের পরিমার্জিত জীবনাচরণ ও নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা দেয়। সঠিক সময়ে নিয়ম মেনে সাহরি গ্রহণ আবার সময়মতো ইফতার করা, যথা সময়ে তারাবিহ নামাজ আদায়সহ অন্যান্য অনেক আমল পালনে সময়ানুবর্তী হওয়ার মহান শিক্ষা আমরা রমজানকে কেন্দ্র করে পেয়ে থাকি। সাহরির সময় শেষ হওয়ার এক মুহূর্ত পর এবং ইফতারের সময় হওয়ার এক মুহূর্ত আগে আমরা কোনো খাবার গ্রহণ করি না। এমন সূক্ষ্ম নিয়মানুবর্তিতার মধ্য দিয়ে আমরা রমজানের যে সময়টুকু পার করি, এ নিয়মানুবর্তিতা সারা বছর পালন করলে জীবনে সফলতা নিশ্চয়ই আসবে।

 
Electronic Paper