পাপাক্রান্ত জনপদ ধ্বংসে আজাব
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:৪১ পূর্বাহ্ণ, মে ০৯, ২০২১
পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ধর্মীয় বিধান অনুসরণ করে সব ধরনের পাপাচার থেকে বিরত থাকার জন্য বারবার তাগিদ দিয়েছেন। একই সঙ্গে মহান আল্লাহ তাঁর বিধান অনুসরণকারীদের দুনিয়া ও আখেরাতের পুরস্কার এবং বিপথগামীদের কঠিন আজাব (শাস্তি) প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। পাপাচারে মত্ত জনপদ ভয়াবহ আজাব দিয়ে ধ্বংস করার বিষয়টিও কোরআনুল কারিমে সুস্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে মানবজাতি এ ব্যাপারে সতর্ক হতে পারে।
পবিত্র কোরআনের সুরা আরাফ-এর ৪ থেকে ৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন, ‘কত (অবাধ্য পাপভারাক্রাপ্ত) জনপদ আমি ধ্বংস করেছি। সেখানে আমার আজাব নাজিল হয়েছে হঠাৎ করে, কখনো রাতে আবার কখনো বা দুপুরে দিবানিদ্রা উপভোগ করার সময়। যখন আমার আজাব ওদের ওপর নেমে এসেছিল, তখন ওদের মুখে কোনো কথা ছিল না। শুধু ওরা আর্তনাদ করে বলে উঠেছিল, ‘হায়! নিশ্চয়ই আমরা সীমালঙ্ঘন করেছিলাম।’ আল্লাহর বিধান না মেনে পাপচারে লিপ্ত হওয়ার কারণে এর আগে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মাদইয়ান সম্প্রদায়, সালেহ (আ)-এর সামুদ সম্প্রদায় ও হুদ (আ.)-এর আদ জাতিকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেন।
বিকৃত পাপাচারে অভ্যস্ত হয়ে ওঠায় লুত (আ)-এর জাতির কেন্দ্রীয় শহর ‘সাদুম’ নগরী শক্তিশালী ভূমিকম্প দিয়ে সম্পূর্ণ উল্টে দেওয়া হয়। মূর্তিপূজা ত্যাগ না করায় আল্লাহ মুহ (আ) এর জাতিকে ভয়ংকর প্লাবন ও জলোচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে দেন। তখন নুহ (আ.)-এর নৌকার যারা আশ্রয় নিয়েছিলেন তারাই শুধু রক্ষা পেয়েছিলেন। নিজেকে খোদা দাবি করা ফেরাউনের কাছে ইমানের দাওয়াত নিয়ে গিয়েছিলেন মুসা ও হারুন (আ.)। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ফেরাউন পাল্টা মুসা (আ.)-কে হত্যা করতে মনস্থির করে। সদলবলে ফেরাউন একদিন মুসা (আ.)-কে ধাওয়া করে। তিন দিকে ঘেরাও হওয়া মুসার দলের সামনে ছিল উত্তাল সাগর। আল্লাহর হুকুমে সাগরে পথ সৃষ্টি হয়। নিজের দল নিয়ে মুসা (আ) এই পথ দিয়ে সমুদ্র পার হয়ে যান। কিন্তু সাগরে ডুবে মারা যায় ফেরাউন। আল্লাহ তাকে পৃথিবীবাসীর কাছে দৃষ্টান্ত হিসেবে রেখে দিয়েছেন। তিন হাজার বছরের বেশি সময় সাগরে নিমজ্জিত থাকার পরও তার লাশে কোনো পচন ধরেনি।
সব দৃষ্টান্তের পরও যারা পাপাচারে মত্ত তাদের হুঁশিয়ার করে পবিত্র কোরআনের বিপুলসংখ্যক আয়াতে আল্লাহর আজাব সম্পর্কে মানবজাতিকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে। সুরা ইউসুফের ১০৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘ওরা কি সত্যিই মনে করে যে, আল্লাহর সর্বগ্রাসী আজাব থেকে বা ওদের অজান্তেই কেয়ামতের আকস্মিক উপস্থিতি থেকে ওরা নিরাপদ?’
‘পাপে নিমজ্জিতদের অন্তরে সত্যের প্রতি কর্ণপাত না করার অভ্যাস সৃষ্টি হয়। আসলে ভয়ংকর আজাব প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত ওরা বিশ্বাস করে না। আর এই ভয়ংকর আজাব আকস্মিক আপতিত হয় ওদের ওপর। তখন ওরা আর্তনাদ করে বলে, ‘আমাদেরকে কি একটা সুযোগ দেওয়া হবেনা?’ (সুরা শুআরা : ২০০-২০৩)
সত্যের বিপক্ষে ষড়যন্ত্রকারী এবং সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়ের উপর আজাব সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ওদের পূর্ববর্তীরাও একইরকম বিভ্রান্তির ধুম্রজাল ছড়িয়েছিল। ওরা ষড়যন্ত্র করেছিল সত্যের বিপক্ষে। ওরা যা-কিছু নির্মাণ করেছিল তার ভিত্তিমূলে আল্লাহ আঘাত হানলেন। ফলে পুরো ছাদই ধসে পড়ল ওদের ওপর। ওরা ভাবতেও পারেনি, এভাবে আজাব আসবে।’ (সুরা আন-নাহল : ২৬) ‘অতঃপর প্রতিশ্রুত আজাব ওদের আঘাত হানল। ভয়ংকর শব্দ। সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়কে তরঙ্গতাড়িত ঝরাপাতার আবর্জনার মতো ছড়িয়ে মিশিয়ে দিলাম।’ (সুরা মুমিনুন : ৪১) ‘‘অতএব তোমরা অপেক্ষা করো সেদিনের, যেদিন আকাশ থেকে ধোঁয়ার কু-লী এসে গ্রাস করবে সমগ্র মানবজাতিকে। (পাপীরা চিৎকার করে বলবে) ‘এ এক কঠিন আজাব!’ ওরা তখন আর্তনাদ করে বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এই আজাব থেকে রেহাই দাও। আমরা অবশ্যই বিশ্বাস স্থাপন করব।” (সুরা দুখান : ১০-১২)
‘এরপর আমি ওদের ওপর আজাব পাঠালাম। এক ভয়ানক আওয়াজ; ওদের সবকিছু চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল খোয়াড়ের বেড়ার জরাজীর্ণ কাঠের মতো।’ (সুরা কামার: ৩১) মুনাফেক ও সত্য অস্বীকারকারীদের আজাব সম্পর্কে কোরআনুল কারিমে বলা হয়েছে, ‘মুনাফেক ও সত্য অস্বীকারকারী নর-নারীর জন্য আল্লাহ নির্দিষ্ট করে রেখেছেন জাহান্নামের অগ্নিকু-, যেখানে ওরা থাকবে চিরকাল। জাহান্নামই ওদের প্রাপ্য। কারণ আল্লাহ ওদের পরিত্যাগ করেছেন। ওদের জন্য অপেক্ষা করছে অনন্ত আজাব।” (সুরা তওবা ৬৮)
‘আল্লাহ ওদেরকে নির্বাসিত করার সিদ্ধান্ত না নিলে দুনিয়াতেই অন্য শাস্তি দিতেন। আর পরকালে তো ওদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আজাব। কারণ ওরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরোধিতা করেছিল। আর কেউ আল্লাহর বিরোধিতা করলে আল্লাহ শাস্তিদানেও কঠোর।’ (সুরা হাশর : ৩-৪) ‘যারা সত্য অস্বীকার করছে, ওদের বিষয়টি আমার ওপর ছেড়ে দাও। জীবনের বিলাস-সামগ্রী ওরা ভোগ করছে, তা ভোগ করার জন্যে আরও কিছুটা সুযোগ দাও। ওদের জন্য আমার কাছে আছে শৃঙ্খল ও গনগনে আগুন, আছে এমন খাবার যা গলায় আটকে যায়, আছে আরও যন্ত্রণাদায়ক আজাব। আর তা বাস্তবরূপ লাভ করবে সেদিন, যেদিন পৃথিবী প্রকম্পিত হবে, পাহাড়-পর্বত চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পরিণত হবে উড়ন্ত ধূলিকণায়।’ (সুরা মুজজাম্মিল : ১১-১৪)
আর আল্লাহর এসব আজাব থেকে যারা রক্ষা পাবেন তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘শুধু যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছিল এবং আল্লাহ-সচেতন ছিল, তাদের আমি রক্ষা করেছিলাম।’ (সুরা হা-মিম-সেজদা:১৮) ‘জান্নাতে নিরাপদ প্রশান্ত আরামে তারা পৃথিবীতে যারা সৎকর্ম করেছে) সব ধরনের সুফল উপভোগ করবে। মৃত্যু আর কখনো তাদের স্পর্শ করবে না। আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করবেন। মূলত এটাই মহাসাফল্য।’ (সুরা দুখান : ৫৫-৫৭)
আজাব থেকে পরিত্রাণের প্রার্থনার বিষয়টি পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘(হে নবী!) প্রার্থনা করো, হে আমার প্রতিপালক! (তোমার সঙ্গে শরিককারীদের) তুমি আজাবের সতর্কবাণী প্রদান করেছ। বাস্তবে এ শাস্তি ঘটার সাক্ষী যদি আমাকে বানাতে চাও, তবেহে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করো না।’ (সুরা মুমিনুন : ৯৩-৯৪) ‘যারা রাত কাটায় তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশে দ-ায়মান হয়ে বা সেজদারত অবস্থায়। যারা প্রার্থনা করে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! জহান্নাম থেকে আমাদের দূরে রাখো। জাহান্নামের আজাব সর্বনাশা আজাব। নিশ্চয়ই অস্থায়ী বা স্থায়ী নিবাস হিসেবেসবচেয়ে জঘন্য।’ (সুরা ফোরকান : ৬৪-৬৬)