বিপদগ্রস্তদের সাহায্য সর্বোত্তম ইবাদত
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:১১ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৯, ২০২১
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহামারীসহ যে কোনো বিপদে নিঃস্বার্থভাবে অসহায় মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করা সর্বোত্তম ইবাদত। তাই প্রত্যেক মুমিন মুসলমানকে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ অন্যান্য ইবাদতের সঙ্গে বিপদগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার মতো মানবিক ও নৈতিক গুণাবলি অর্জন জরুরি।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে কোনো পুণ্য নেই, কিন্তু পুণ্য আছে কেউ আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, সব কিতাব এবং নবীদের প্রতি ঈমান আনয়ন করলে এবং আল্লাহ-প্রেমে আত্মীয়স্বজন, এতিম, মিসকিন, পর্যটক, সাহায্য প্রার্থীদের এবং দাস মুক্তির জন্য অর্থদান করলে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করলে ও জাকাত প্রদান করলে এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূর্ণ করলে, অর্থ সংকটে, দুঃখ ক্লেশে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্য ধারণ করলে। এরাই তারা যারা সত্যপরায়ণ এবং তারাই মুত্তাকী’ (সুরা আল বাকারা, আয়াত : ১৭৭)।
ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী মানুষ যখন ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপদগ্রস্ত হয়, তখন তার ধর্মের ভাই অন্য মানুষকে বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির জন্য পাশে দাঁড়াতে হয়। অসহায় মানুষের দুর্দিনে তাদের সর্বপ্রকার আর্থিক সহায়তা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন, চিকিৎসাসেবায় এগিয়ে আসা ঈমানের দবি। ইসলামে পারস্পরিক উপকারের চেষ্টা এবং যার যা কিছু সামর্থ্য আছে তদনুসারে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে, যাতে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের দুঃখ-কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়। নবী করিম (সা) বলেছেন, ‘একটি খেজুরের অর্ধাংশ দিয়ে হলেও দোজখ থেকে বাঁচবে। আর তা যদি না থাকে, তাহলে অসহায়, অভাবি ও হতদরিদ্রদের সঙ্গে মিষ্টি কথা বলবে, ভালো ব্যবহার করবে, যাতে পরকালে তোমার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।’ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাহায্যার্থে মোটা অঙ্কের অর্থ দান করতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সাহায্য করতে শুধু টাকা-পয়সা দিয়েই নয়, বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহমর্মিতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা করেও মানুষকে সহযোগিতা করা যায়। ইসলাম মানবিক কারণে সামান্য পরিমাপ সহায়তাকেও খাট করে দেখে না। সে জন্য অতিশয় নগণ্য পরিমাপ দানকেও উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দান-সাদকা দেয়, তা একটি খেজুর পরিমাপও হোক না কেন, আল্লাহ তা নিজ হাতে গ্রহণ করেন। তবে শর্ত এই যে, তা বৈধ পথে উপার্জিত হতে হবে, কেননা আল্লাহ এই বস্তুকেই পছন্দ করেন এবং তা বৃদ্ধি করে নেন আর তা এতটাই যে, এই খেজুর এক পাহাড় পরিমাপ হয়ে যায়।’ (বুখারি ও মুসলিম) এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে। ‘হে মুমিনগণ! আমি তোমাদের যে জীবনের উপকরণ দিয়েছি, তা থেকে তোমরা ব্যয় কর সেদিন আসার পূর্বেই যেদিন কোনো বেচাকেনা বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ থাকবে না।’ (সূরা আল বাকারা, আয়াত: ২৫৪)
তবে সাহায্যকারীর এ দান যাতে কোনোভাবেই লোক দেখানো না হয় সে ব্যাপারে ইসলামে বারংবার সতর্ক করা হয়েছে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘রোজ কিয়ামতের দিন মানুষ বর্ণনাতীত ক্ষুধা-পিপাসা নিয়ে উলঙ্গ অবস্থায় উত্থিত হবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়াতে মানুষকে খাদ্য দান করেছে, সেদিন তাকে খাদ্য দান করা হবে। যে আল্লাহকে খুশি করার জন্য মানুষকে পানি পান করিয়েছে, তাকে সেদিন পানি পান করিয়ে তার পিপাসা দূর করা হবে। যে মানুষকে বস্ত্র দান করেছে, তাকে সেদিন বস্ত্র পরিধান করিয়ে তার লজ্জা নিবারণ করা হবে।’ অন্য হাদিসে উল্লেখ আছে, হাশরের ময়দানে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দানশীল লোকেরা তাদের দানের ছায়ার নিচে অবস্থান করবে।’
রাসূলুল্লাহ (সা.) সব সময় অন্যের বিপদ-আপদ ও দুঃখ-কষ্ট মাথায় রেখে উম্মতদের জীবন-যাপনের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি নিজেও বিপদে-আপদে রুগ্ন মানুষের সেবা করেছেন, অন্যদের দান-সাদকা ও বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করার ব্যাপারে উৎসাহিত করে বলেছেন, ‘তোমরা দান-সাদকা কর। এতে আল্লাহ্ খুব খুশি হন ও দানকারীর সম্পদ বাড়িয়ে দেন। যে ব্যক্তি শুধু প্রথাগত ইবাদত করে কিন্তু আল্লাহর রাস্তায়, বিপদগ্রস্ত ও আর্তমানবতার কল্যাণের জন্য দান-খয়রাত, জাকাত সাদকা ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসে না, সমাজের অসহায়, দুর্গত, ক্ষতিগ্রস্ত গরিব-দুঃখী মানুষের অভাব দূরীকরণ, চরম ক্ষুধা নিবারণ ও দারিদ্র্যবিমোচনে দানের হাত সম্প্রসারণ করে তাদের পাশে দাঁড়ায় না, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজে অংশগ্রহণ করে না, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা) এর কাছে কখনোই প্রিয়ভাজন হতে পারবেনা।’
মানবিক বিপর্যয় ও দুর্যোগ মোকাবিলায় বিপদাপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আর্তের সেবায় প্রত্যাশিত ভূমিকা রেখে অসহায় মানুষকে বাঁচানোর এখনই সময়। মানুষ দাঁড়াবে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে এটাই ইসলামের বিধান। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘পৃথিবীর ওপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে এর শোভা করেছি, মানুষকে এ পরীক্ষা করার জন্য যে, তাদের মধ্যে কর্মে কে শ্রেষ্ঠ’ (সূরা আল কাহফ, আয়াত: ৭)।