গোপন দান আল্লাহর অধিক পছন্দনীয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:১৫ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৬, ২০২১
আল্লাহর রহমতের অমিয়ধারা বর্ষণের তৃতীয় দিবস আজ। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রতি ঐকান্তিক বিশ্বাস ও তার বিধানের কাছে মাথানত করে দেওয়ার মানসিকতায় এই মাহে রমজানে ইবাদতে মশগুল থাকার পাশাপাশি দান-সদকা এবং অসহায় মানুষের সহযোগিতার মাধ্যমে রয়েছে গোনাহ মাফের ও জাহান্নামের আগুন থেকে নিষ্কৃতি লাভের সুযোগ।
নফল দান-সদকা সবসময় করা গেলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ যে কোনো বিশেষ প্রয়োজনে তা দেওয়ার ব্যাপারে ইসলামে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহে রাসুলে অনেক উৎসাহব্যঞ্জক বাণী এসেছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, কে আছে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে, ফলে তিনি তার জন্য বহুগুণে বাঁড়িয়ে দেবেন। (সুরা আল বাকারা : ২৪৫) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদকা করে, আর আল্লাহ হালাল ব্যতীত অন্যকিছু গ্রহণ করেন না, আল্লাহ তায়ালা তা তার ডান হাতে গ্রহণ করেন এরপর তিনি তা লালন করেন, যা (ওই সদকা) এক সময় পাহাড়তুল্য হয়ে যায়।’ (বুখারি ও মুসলিম) ধর্মীয় নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রকাশ্য ও গোপনে দুভাবেই দান করার সুযোগ থাকলেও গোপন দানে অধিক সওয়াব প্রাপ্তির কথা কোরআন-হাদিসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ২৭১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-সাদকা করো তবেভালো কথা। আর যদি তা গোপনে গরিব-দুঃখীকে পৌঁছে দাও তবে তা তোমাদের জন্য অতি উত্তম এবং এভাবে তোমাদের অনেক গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। আর তোমরা যা কিছু করে থাকো আল্লাহ অবশ্যই তা জানেন।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দান-সদকা করল, অতঃপর তা গোপন করল, এমনকি তার বাম হাত জানল না তার ডান হাত কী দান করছে- ওই ব্যক্তি হাশরের ময়দানে মহান আল্লাহর সুশীতল ছায়া প্রাপ্ত হবেন। যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত অন্য কোনো ছায়া থাকবেনা। (বুখারি ও মুসলিম)
এদিকে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ও তাঁর রাসুল প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা) সদকার জন্য সম্পদের হালাল ও ভালো অংশ বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদে লোক দেখানো দান-সাদকায় কোনো সওয়াব নেই বলেও হুঁশিয়ার করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে- তোমরা কখনো ছাওয়াব অর্জন করতে পারবে না, যতক্ষণ না ব্যয় করবে তা থেকে, যা তোমরা ভালবাসো। (সুরা আলে ইমরান : ৯২)
পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারায় সদকা গ্রহীতাকে খোঁটা ও কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুরাটির ২৬৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, হে মুমিনগণ তোমরা খোঁটা ও কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমে তোমাদের সদকা বাতিল করো না। ইসলামে সাদকা দেওয়ার ক্ষেত্রে আত্মীয়স্বজনদের প্রাধান্যের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যেসব আত্মীয়স্বজনের ব্যয়ভার বহন করতে হয় না, এ ধরনের আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে যারা অভাবি, তাদের সদকা দেওয়া একজন মুসলমানের জন্য মুস্তাহাব। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় মিসকিনকে সদকা দান একটি সদকা, আর আত্মীয়কে দানে রয়েছে দুটি- সদকা ও আত্মীয়তা-বন্ধন রক্ষা। কোরআন ও হাদিসের ভাষ্য থেকে বোঝা যায় নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশী ও এতিমরা যদি অভাবগ্রস্ত হয় তবে তারা অন্যদের চেয়ে সাহায্য লাভের বেশি অধিকার রাখে। নতুবা সমাজের দারিদ্র ও অসহায় মানুষের ভেতর তাদের অসহায়ত্বের অনুপাতে দান সহযোগিতা লাভ করবে।
দুর্ভিক্ষের দিনে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত শ্রেণির ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে তো বন্ধুর গিরিপথে প্রবেশ করেনি। তুমি কি জানো বন্ধুর গিরিপথ কী তা হলো দাস মুক্ত করা অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে খাবার দান করো এতিম আত্মীয়কে অথবা দারিদ্র্য নিষ্পেষিত নিঃস্বকে। (সুরা বালাদ, আয়াত : ১১-১৬)
রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন, সে ব্যক্তি আমার প্রতি (যথাযথভাবে) বিশ্বাস স্থাপন করেনি, যে পরিতৃপ্ত হয়ে ঘুমায় এবং তার প্রতিবেশী তার পাশে ক্ষুধার্ত থাকে অথচ সে তার সম্পর্কে জানে।’ (মুজামুল কাবির, হাদিস : ৭৫১) এদিকে, গোপন দান প্রদানের ক্ষেত্রে ইসলামে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হলেও বিশেষ ক্ষেত্রে প্রকাশ্য অপরিহার্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যদি সদকা প্রকাশ করায় কোনো ধর্মীয় স্বার্থ থাকে, যেমন অন্যদেরকে উৎসাহিত করা, তাহলে প্রকাশ্যে সদকা করাই উত্তম। তবে এ ব্যাপারে নিজের নিয়তের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে এবং নিয়ত যাতে কলুষমুক্ত থাকে সে ব্যাপারে যতœবান হতে হবে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নফল সদকা গোপনে দান করলে তাতে ৭০ বেশি সাওয়াবলাভ হয়, পক্ষান্তরে ফরজ সদকা তথা জাকাত প্রকাশ্যে আদায় করলে তাতে ২৫ গুণ বেশি সাওয়াব পাওয়া যায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দানের মাধ্যমে সাওয়াবলাভের পাশাপাশি গোনাহ মাফের ঘোষণাও দিয়েছেন।