ক্রোধান্বিত ব্যক্তির সঙ্গে আচরণ কেমন হওয়া উচিত?
খোলা কাগজ ডেস্ক
🕐 ৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ০৫, ২০২০
ইমাম ইবনুল জাওযি রহ.-র ‘সইদুল খাতির’ বই থেকে উদ্ধৃত
রাগ বা ক্রোধ মানুষের ক্ষোভের অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। যা থেকে সে কখনো আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে এবং তার কাছে থাকা কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর ওপর সহিংস প্রভাব ফেলে। যে কোনো মানুষই রাগ অনুভব করতে পারেন। যখন আপনি দেখেন আপনার কোনো সঙ্গী রেগে গেছে এবং অন্যায় কথা বলা শুরু করেছে, তখন উচিত হবে, তার বলা কথাগুলোকে কনিষ্ঠ আঙ্গুল পরিমাণও বিশ্বাস না করা। এ কারণে তাকে পাকড়াও না করা। কারণ এখন তার অবস্থা বেহুঁশ অবস্থা। কী বলছে নিজেই জানে না। আপনি বরং তার আকস্মিক বিষয়টিতে ধৈর্যধারণ করুন। তার ওপর কঠোর হবেন না। কারণ শয়তান তার ওপর প্রভাব ফেলছে। তার মেজাজ বিগড়ে গেছে এবং বুদ্ধি লোপ পেয়েছে।
এখন যদি মনে কোনো বিদ্বেষ পুষে রাখেন কিংবা তার অসৌজন্য আচরণের মোকাবেলায় আপনিও কঠোরতা অবলম্বন করেন, তাহলে এটা উচিত হবে না। এ মুহূর্তটির জন্য আপনি যেন এক বুদ্ধিমান ব্যক্তি একজন বুদ্ধিবিলুপ্ত মানুষের মুখোমুখি হয়েছেন। যেন সচেতন এক ব্যক্তি এক বেহুঁশ পাগলের মুখোমুখি হয়েছেন। সুতরাং এখন আপনার অসৌজন্যমূলক আচরণটাই হবে; তার নয়। আপনি বরং এ সময় তাকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখতে থাকুন। তার প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তনগুলো পর্যবেক্ষণ করতে থাকুন এবং তার প্রতি সদাচরণ প্রদর্শন করুন।
তার রাগ পড়লে স্বাভাবিক হবে, তখন আচরণের জন্য অনুতপ্ত হবে এবং আপনার ধৈর্যের কথাও স্বীকার করবে। আপনার প্রতি তার ধারণা অনেক উঁচু হবে। আপনার প্রতি তার হৃদয় কোমল হবে। আর কিছুই যদি নাও হয়, তবুও এতটুকু তো সে বুঝতে পারবে, তার রাগের সময়ের কর্মকাণ্ডে আপনি তার প্রতি রূঢ় আচরণ করেননি।
মানুষের স্বভাবে এটি রাগের এমন এক অবস্থা, যেটাকে পাশের মানুষের সয়ে নিতে হয়। পিতার রাগের সময় সন্তানকে। স্বামীর রাগের সময় স্ত্রীকে এবং স্ত্রীর রাগের সময় স্বামীকে। এভাবে প্রতিটি পাশের মানুষকেই অন্যের রাগের সময় সয়ে নিতে হয়। যাতে রাগান্বিত ব্যক্তি তার কথাগুলো বলে স্বস্তি পায় ও শান্ত হয়। তার রাগ প্রশমিত হয়। এ সময় আপনি কিছুতেই তার ওপর চড়াও হবেন না। কড়া কথা বলবেন না। তাহলে দেখা যাবে, রাগ প্রশমিত হলে সে নিজেই অনুতপ্ত হবে এবং নিজের বাড়াবাড়ির জন্য লজ্জিত হবে।
এভাবে যদি কারও ক্রোধান্বিত অবস্থার আচরণ ও কথাগুলো সয়ে যাওয়া হয়, দেখবেন কোথাও আর শত্রুতা থাকবে না। তার রাগের অবস্থায় তার সঙ্গে সে আচরণ করা হয়েছে, স্বাভাবিক হয়ে সে এর সুন্দর প্রতিদানের চেষ্টা করবে।
কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এই পদ্ধতি অনুসরণ করে না। বরং তারা যখন কাউকে রাগান্বিত হতে দেখে, তারা নিজেরাও রাগান্বিত হয়ে ওঠে। রাগান্বিত ব্যক্তির মোকাবেলা করে কঠিন কথা বলে ও কঠোর আচরণের মাধ্যমে। এটা বুদ্ধি ও প্রজ্ঞাপূর্ণ কাজ নয়। বরং প্রজ্ঞাপূর্ণ কাজ সেটাই, যা আমি এতক্ষণ বর্ণনা করলাম। তবে জ্ঞানীরাই শুধু এগুলো অনুধাবন করে ও কাজে পরিণত করে।