ঢাকা, সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩০

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নবী-রাসুলদের ভালোবাসা

অনলাইন ডেস্ক
🕐 ৯:৫৭ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩

নবী-রাসুলদের ভালোবাসা

আল্লামা ইকবাল ভালোবাসাকে ভুবনজয়ী বলেছেন। ‘ভুবনজয়ী’ শব্দ উচ্চারণ করলে আমাদের মন ও চিন্তা সেসব বিশ্ববিজেতার দিকে চলে যায় নিজেদের শক্তি, প্রভাব-প্রতিপত্তির মাধ্যমে বিভিন্ন ভূখণ্ড জয় করেছে এবং লাখ লাখ মানুষকে (দেহ) দাসে পরিণত করে রেখেছে।

 

যারা অসংখ্য দার্শনিক ও বুদ্ধিজীবীর মস্তিষ্ক নিষ্ক্রিয় করেছে, তাদের ভাষাহীন করেছে, যুক্তি-প্রমাণ ভোঁতা করে দিয়েছে। বহু ধনাঢ্য ব্যক্তি মানুষের মুখে স্বর্ণের মোহর এঁটে দিয়েছে এবং অর্থের লাগাম লাগিয়েছে।

ফলে তারা ধনীদের গুণগ্রাহীতে পরিণত হয়েছে। যদিও তাদের বিবেক তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে এবং অন্তর তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছে, তবু তাদের জিহ্বা ধনীদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে আছে।

কিন্তু ভালোবাসার বিজয়টা অন্যসব বিজয় থেকে ভিন্ন, উচ্চতর। এতটাই ভিন্ন যে ভালোবাসার কারণে মানুষকে অক্ষমতা প্রকাশ করতে হয়, মানুষের অধিকার বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।

কেননা মানুষ তাঁর প্রিয় বস্তু, ভালোবাসার মানুষকে হারাতে হারাতে পায় এবং ভালোবাসার ময়দানে হারতে হারতে মানুষ জিতে যায়। একসময় কোনো স্বজাতিকে, সৃষ্টির সেরা মানুষকে, কোনো হৃদয়বান ব্যক্তিকে, কোনো পাগলপাড়াকে পরাজিত বলতে তারও কষ্ট হয়, সে লজ্জিত হয়।

এটা হয় তার মনুষ্যত্বের প্রতি তার অনুরাগ, সূক্ষ্ম আবেগ ও অনুভবের কারণে। রাজা-বাদশাহরা, বিশ্ববিজেতারা, বস্তুগত উপায়-উপকরণের অধিকারীদের বিশ্বাস হলো কোনো ‘বাঁশও থাকবে না, কোনো বাঁশরিও বাজবে না’।

কিন্তু ভালোবাসার ধারকদের মূলনীতি হলো ‘বাঁশ থাকবে, তবে বাঁশরি শুধু তার সুর পাল্টে দেবে। আগে সে ঘৃণা ও বিদ্বেষের গান গাইত, এখন সে ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার গান গাইবে।’

রাজা-বাদশাহ ও ক্ষমতার চর্চাকারীদের মূলনীতি হলো শত্রুকে ধ্বংস করে দেওয়া হবে। যারা ভালোবাসার ধারক তাদের মূলনীতি হলো শত্রুকে শুধু অনুরাগী নয়; বরং বন্ধুতে পরিণত করা হবে।

এই মূলনীতির ফল হলো যে খুনপিয়াসী হয়ে এসেছিল, সে কলেমা পাঠকারী ও জীবনোৎসর্গকারী হিসেবে ফিরে যায়। আল্লাহর নবী-রাসুল (আ.), ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক নেতা ও নির্লোভ মানবসেবীদের পথই হলো ভালোবাসার পথ।

আখলাক ও আধ্যাত্মিকতা, তাসাউফ ও সাধনার ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্তে ভরপুর যে ব্যক্তি জীবন নিতে এসেছিল কিন্তু নিজেই জীবন ও মন দুটোই দিয়ে বসে আছে। না না আমি ভুল বললাম। সে হারায়নি; বরং সে সব কিছু লাভ করেছে।

সে খুঁজে পেয়েছে দৃষ্টির আড়ালে থাকা অভ্যন্তরীণ শোভা ও সৌন্দর্য, ভালোবাসা ও হৃদ্যতা। প্রতিটি মানুষের ভেতর ভালোবাসার, অন্যকে মূল্য দেওয়ার, অন্য কারো দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে সে তা শুধু চিনতে পারেনি; বরং স্বাদ পেয়েছে।

ফলে সে সারা জীবন ভালোবাসার স্বাদ নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। মূলত আগে সে নিজেকে চিনত না, এখন চিনতে পেরেছে। আল্লামা ইকবাল বলেন, ‘নিজেতে ডুব দিয়ে খুঁজে নাও জীবনের পথ/যদি তুমি আমার না হও, না হলে; নিজের তো হও।’

কত মানুষ এমন ছিল, যাদের মন-মস্তিষ্কে সংশয় ও অস্বীকারের গিঁট পড়ে ছিল। দর্শন ও যুক্তি, জ্ঞান ও বুদ্ধি যতই গিট খোলার চেষ্টা করেছে, তাতে আরো বেশি নতুন গিঁট পড়েছে। কিন্তু এসব সহৃদয় ব্যক্তি ও ভালোবাসার ধারকদের একটি অন্তরজয়ী দৃষ্টি, চোখের দীপ্তি ও মুখের হাসি মনের গিঁট ও জটিলতা মুহূর্তের মধ্যে দূর করে দেয়। আল্লামা ইকবাল বলেন, ‘উভয় জগৎ থেকে অন্তরকে করেছে বিমুখ/আশ্চর্য বিষয় অন্তরের এই পরিতৃপ্তি।’

 
Electronic Paper