ইসলামে স্বাধীনতার সীমানা
শাইখ ইউসুফ আল-কারযাভী
🕐 ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ০৪, ২০১৮
স্বাধীনতার মূল নীতির পক্ষে ইসলামের অবস্থান। দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) এ ব্যাপারে তার বিখ্যাত উক্তিটি করে গিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা কবে থেকে তাদের ক্রিতদাস বানিয়েছ অথচ তাদের মায়েরা তো তাদের স্বাধীন হিসেবেই জন্ম দিয়েছে!
আলী ইবনে তালিব (রা.) তার অসিয়তে বলেছেন, অন্যের জীবনকে যাপন করও না, আল্লাহ তোমাকে স্বাধীন হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর সৃষ্টির নিয়ম ও জন্মের প্রকৃতি অনুযায়ী মানুষ স্বাধীন। তাই স্বাধীনতা মানুষের অধিকার, মানুষ কারও দাস নয়।
ইসলাম এসেই স্বাধীনতাকে সমর্থন করেছে অথচ স্পষ্ট, সে যুগে চিন্তা, রাজনীতি, সমাজ, ধর্ম এবং অর্থনীতির দিক থেকে মানুষ পরাধীন ছিল। ইসলাম মানুষকে বিশ্বাস, চিন্তা, মতপ্রকাশ ও সুস্থ সমালোচনার অধিকার দিয়েছে। মোটকথা, মানুষ যেসব গুরুত্বপূর্ণ স্বাধীনতা বা অধিকার চায়, তার সবই ইসলাম তাকে দিয়েছে।
তবে ইসলাম স্বাধীনতা দিয়েছে ব্যক্তির অধিকারের। ধর্মের পর অধর্ম ও পাপাচারের স্বাধীনতা ইসলাম দেয়নি। আজকাল যাকে ব্যক্তি স্বাধীনতা হিসেবে দাবি করা হয়, ইসলামের স্বাধীনতার স্বরূপ তেমনটা নয়। ‘ব্যক্তি স্বাধীনতা’ পরিভাষা ব্যবহারের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ইচ্ছেমতো ব্যভিচার, মদপান ও সব ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করা। তবে কল্যাণ ও সংশোধনের সঙ্গে জড়িত ব্যাপারগুলোর কোনো স্বাধীনতা সেখানে নাও থাকতে পারে।
অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মাণ হচ্ছে, সমালোচনা করা যাবে না, যা বিশ্বাস করা হয় তা বলা যাবে না, উত্তম কাউকে বলা যাবে না, ‘তুমি ভালো কাজ করেছ’, খোঁড়াকে খোঁড়া বলা যাবে না। ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে শুধু নিজেকে নষ্ট করার মধ্যে, নিজের চরিত্র বরবাদ করার মধ্যে, নিজের চেতনাকে বিকৃত করার মধ্যে, নিজের ইবাদতকে নষ্ট করার মধ্যে, নিজের পরিবারকে ধ্বংস করার মধ্যে।
এ যদি হয় স্বাধীনতার অর্থ, তাহলে ইসলাম এমন স্বাধীনতাকে অনুমোদন করে না। এটা পাপাচারের স্বাধীনতা; অধিকারের স্বাধীনতা নয়।