নদীগর্ভে স্কুল ভবন, বালুচরে টিনের চালায় পাঠদান
আদিতমারী (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
🕐 ৬:০০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১
সাইফুল ইসলাম। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।
গত বছর যখন সে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল তখন করোনা সংক্রমণের কারণে বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে গত ১৮ মাসে তার আর বিদ্যালয়ে আসা হয়নি। দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয় খুলেছে। সাইফুল ইসলাম চতুর্থ শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠেছে।
বিদ্যালয় এসেছে কিন্তু রঙিন টিনের সেই সৌন্দর্যময় বিদ্যালয়টি আর নেই। বিদ্যালয়ে এসে সহপাঠীদের কাছে জানতে পারে একমাস আগে তিস্তা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে তার বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থা শুধু পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নয়।
গত ২৭ আগস্ট একই ইউনিয়নের পূর্ব হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বিলীন হয়ে যায় একই এলাকার কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিও। তবে বিদ্যালয় দুটি পুনঃস্থাপনের স্থান নির্ধারণ নিয়ে দ্বন্দ্বও দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গত ২৭ জুলাই ও পূর্ব হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গত ২৭ আগস্ট তিস্তা নদীর ভাঙনের শিকার হয়। পূর্ব হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাটিকাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের পুরাতন ভবন তিনটি কক্ষে পাঠদান দেওয়া হচ্ছে।
পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওই এলাকার সাত ভাইয়ের বালুচরে একটি টিনের চালা করে পাঠদান দেওয়া হচ্ছে। প্রচণ্ড রোদের কারণে ওই টিনের চালার মধ্যে ক্লাস করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। স্থানীয় প্রশাসন বিদ্যালয় দুটি পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলে ওই বিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
শিক্ষার্থী সালমা আক্তার বলেন, টিনের চালা ও গরম বালুর ওপর ক্লাস করতে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। উপরে টিনের তাপ ও নিচে বালুর তাপ। আমাদের বিদ্যালয়ে যদি জরুরিভাবে ভালো ক্লাসরুম করে না দেয় তাহলে আমাদের ক্লাস করতে খুব কষ্ট হবে।
ওই এলাকার হাফিজুল ইসলাম ও সাইদুল ইসলাম বলেন, পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে ভেঙে যাওয়ায় এই চরটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আগে সে চরে বিদ্যালয়টি ছিল ওই চরে এখন মাত্র ২০-২৫টি পরিবার বসবাস করে। বর্তমানে যে স্থানে টিনের চালা করে বিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছে সেই চরে দেড় শতাধিক পরিবার বসবাস করে। সে কারণে এই স্থানে ভালো মানের ক্লাস রুম তৈরি করলে অনেক বাচ্চা লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। দেখে মনে হচ্ছে, এই চরটি সহজে নদী ভাঙনের শিকার হবে না। আগে যেখানে স্কুল ছিল ওই স্থানে যদি আবারও স্কুল তৈরি করা হয় তাহলে আগামী বন্যায় আবারও নদী ভাঙনের শিকার হতে পারে বিদ্যালয়টি।
পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শহিনুর ইসলাম বলেন, বর্তমান যে চরে টিনের চালা করা হয়েছে ওই চরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। সে কারণে ওই চরে বিদ্যালয়টি পুনঃস্থাপনসহ জরুরিভাবে ক্লাসরুম তৈরি করা প্রয়োজন।
পাটিকাপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মুজিবুল আলম সাহাদাত বলেন, এবার নদীভাঙনে আমার ইউনিয়নে দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা টিনের চালায় কষ্টে ক্লাস করছে। তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে পরিবেশ উপযোগী ক্লাসরুম তৈরি করা প্রয়োজন।
হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মামুন বলেন, আমি বিদ্যালয় দুইটি পরিদর্শন করেছি। জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যালয় দুইটির স্থান নির্ধারণ করে অবকাঠামো তৈরির ব্যবস্থা করা হবে।