সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
জনবল সংকটে ব্যাহত সেবা
সুদীপ্ত শামীম, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)
🕐 ৮:২৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ০৩, ২০২১
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটের অভাবে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। এতে এ এলাকার কয়েক লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।
জানা গেছে, চিকিৎসক ও জনবল সংকটে এ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার (ওটি) চালু করা যাচ্ছে না। প্রসবজনিত সমস্যাসহ অপারেশনের রোগীদের শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে রংপুর মেডিকেলসহ বাহিরের বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন নষ্ট থাকায় চিকিৎসা কাজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ইসিজি মেশিন না থাকায় হার্টের রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে হতদরিদ্র, বিত্তহীন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের রোগীসাধারণ আর্থিক সংকটসহ সরকারি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৯ লাখ লোকের একমাত্র ভরসা এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৩১ শয্যা থেকে এটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবলসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না করায় অন্তহীন সমস্যায় চিকিৎসাসেবা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে রোগীদের ভিড়। এ সময় ডাক্তার ও এসএসএমওদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে হিমশিম খেতে দেখা যায়। এখানে শুধুমাত্র বহিঃর্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে দুইশ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। করোনার প্রতিরোধে প্রায় দৈনিক একশজন টিকা গ্রহণ করেন।
তাছাড়া, ৫০ থেকে ৬০ জন মা ও শিশু ভ্যাকসিন সেবা নিয়ে থাকেন। তবে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বের হলে বিভিন্ন কোম্পানীর মেডিকেল রি-প্রেজেন্টেটিভরা ঘিরে ধরেন। তারা মোবাইলে ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলছেন। এতে রোগীরা অতীষ্ট হচ্ছে। কর্তপক্ষ বারবার নোটিশ দিলেও রি-প্রেজেন্টেটিভরা বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না।
সূত্র জানায়, ১০ টি চিকিৎসক পদের মধ্যে পাঁচটিই শূন্য। মেডিসিন, এ্যানেসথেসিয়া, শিশু, সার্জারি, গাইনী পদগুলো শূন্য থাকায় রোগী চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় সাধারণ ডাক্তার ও এসএসএমওগণ কোনোমতে রোগীদের সেবা দেয়ার কাজ চালাচ্ছেন।
অন্যদিকে, সাতটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিটিতে একজন মেডিকেল অফিসার, একজন সহকারী মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন অফিস সহায়কের পদ রয়েছে। এর মধ্যে একটিতে নেই মেডিকেল অফিসার, চারটিতে নেই উপসহকারী মেডিকেল অফিসার, পাঁচটিতে নেই ফার্মাসিস্ট ও অফিস সহায়ক নেই তিনটিতে।
এছাড়াও, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারী ৮৫টি পদ থাকলেও ১৭টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। ইউনিয়ন সহকারী মেডিকেল অফিসার আটটি পদ থাকলেও আটটি পদই খালি আছে। হাসপাতালের জনবল সংকটে সেগুলোতে কাংখিত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আশরাফুজ্জামান সরকার বলেন, চিকিৎসকসহ জনবল এবং অন্যান্য সমস্যা থাকলেও আমরা রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। চিকিসৎসক ও জনবলসহ নানা সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করি সহসা এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। শূন্য পদগুলো পূরণ হলে আমরা সঠিকভাবে রোগী সাধারণকে উন্নত সেবা দিতে সক্ষম হবো।
গাইবান্ধা জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার আ.ম আখতারুজ্জামান বলেন, জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসকসহ জনবল সংকট রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। পুরো জেলায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর অনেক পদ খালি রয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় পদগুলো পূরণে একটু সময় লাগবে।