ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পাহারার নামে চাঁদাবাজি

আব্দুল্লাহীল বাকী বাবলু, পীরগঞ্জ (রংপুর)
🕐 ৯:২০ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৭, ২০২১

পাহারার নামে চাঁদাবাজি

রংপুরের পীরগঞ্জের ভেণ্ডাবাড়ী খালাশপীর সড়কের কাদিরাবাদ বন বিট এলাকায় প্রায় ৬ বছর ধরে বেপরোয়াভাবে চাঁদাবাজি করে আসছে কতিপয় চিহ্নিত ব্যক্তি। সন্ধ্যা নেমে আসতে না আসতেই শুরু হয় পাহারার নামে সড়কে বাঁশকল ফেলে চাঁদাবাজি। পাহারাদারদের নির্ধারিত চাঁদা দিতে গড়িমসি করলেই মোটরসাইকেল আরোহী, রিকশাভ্যান, চার্জার অটো, মাইক্রোবাস, যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক চালক ও যাত্রীদের হেনেস্থার শিকার হতে হয় হরহামেশাই। শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার শিকারও হয়েছেন অনেকে। শুধু তাই নয়, চোরাকারবারী ও মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সঙ্গেও রয়েছে তাদের নিবিড় সম্পর্ক। রাতের অন্ধকারে নির্বিঘ্নে পথ চলার জন্য পাহারাদারদের সঙ্গে চুক্তি করে অবাধে ব্যবসা চালাচ্ছেন চোরাকারবারী ও মাদক ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, ভেণ্ডাবাড়ী-খালাশপীর ১০ কিলোমিটারের সড়কে প্রতিদিন প্রায় সহস্রাধিক যানবাহন চলাচল করে। কাদিরাবাদ বন বীটের চৌরাস্তা ও পাঁচমাথার মধ্যে আধা কিলোমিটার সড়কের দুপাশে ঘন জঙ্গল থাকায় এক সময় প্রায় রাতেই ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধ ঘটত।

এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় ও থানা পুলিশ প্রশাসনের সিদ্ধান্তে ওই এলাকার পেশাদার চোর, ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের তালিকা করে কাদিরাবাদ বন বিট এলাকার সড়ক পাহারার পরিকল্পনা করা হয়। এতে সড়কের আশপাশের খেতাবেরপাড়া, কানঞ্চগাড়ী, মদনখালী গ্রামের প্রায় ১৩/১৪ জন চিহ্নিত অপরাধীদের সুস্থ জীবনে ফিরে আসার অঙ্গীকারে রাতে সাধারণ পথচারীদের যানমালের নিরাপত্তা দিতে ভ্রাম্যমাণ পাহারা দেওয়ার অনুমতি দিয়ে একটি ঘরও করে দেওয়া হয়। বিনিময়ে তারা পথচারীদের সাধ্যানুযায়ী সাহায্য সহযোগিতা (চাঁদা) নিতে থানা প্রশাসনের অলিখিত অনুমতিও পায়। প্রাথমিক পর্যায়ে সড়ক পাহারাদারদের স্থানীয় ও থানা প্রশাসন থেকে যৎসামান্য আর্থিক সহযোগিতা দিলেও কিছুদিনের মধ্যে তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে প্রশাসনের অনুমতিকে পুঁজি করে গায়ের জোরে কোনো কৈফিয়ত ছাড়াই প্রতি মোটরসাইকেল, রিকশাভ্যান, অটোচার্জার থেকে ১০ টাকা, পাওয়ার ট্রিলার ৩০, মাইক্রোবাস ৫০ থেকে ১০০, ট্রাক ১০০ থেকে ২০০, যাত্রীবাহী বাস ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা বাধ্যতামূলক আদায় করা হচ্ছে। কেউ টাকা দিতে ব্যর্থ হলে সংঘবদ্ধ পাহারাদারের তোপের মুখে পড়তে হয়। হেনেস্তা, জুলুম এমনকি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনাও দীর্ঘ। অথচ ডিউটি পোস্ট এলাকার ওই আধা কিলোমিটার সড়কের দুই ধারের গাছপালা সম্প্রতি কাদিরাবাদ বনবিভাগ শিডিউল অনুযায়ী কেটে ফেলায় অপরাধীদের আড্ডাস্থল নষ্ট হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। রাতে ব্যবস্থা করা হয়েছে আলোর।

ভুক্তভোগী ভ্যানচালক আসাদুল, মহেন্দ্র, চার্জার অটো চালক আনোয়ার, বুলবুল, জিয়া বলেন, আমরা সন্ধ্যার পর ওই সড়কে দু-একজন যাত্রী নিয়ে যেতে ভয় হয়। কারণ পাহারাদারদের চাঁদা দিয়ে পোষায় না।

সম্প্রতি রংপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ শঠিবাড়ী জোনাল অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ সপরিবারে বাসযোগে পীরগঞ্জের বিনোদন কেন্দ্র ‘আনন্দ নগর’ থেকে সন্ধ্যায় ফেরার পথে কথিত পাহারাদাররা বাসটি থামিয়ে ৩০০ টাকা চাঁদা দাবি করে। এতে বিদ্যুৎ কর্মকর্তা, কর্মচারীরা প্রতিবাদ করলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত পাহারাদাররা মজুত রাখা লাঠি ও গাছের ডাল দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এ ব্যাপারে ৯ জন পাহারাদারকে আসামি করে থানায় মামলা হয়- যা বিচারাধীন। নতুন বছরের প্রথম দিনে উপজেলার ভেণ্ডাবাড়ী গ্রামের হতদরিদ্র বাদাম বিক্রেতা গোপাল চন্দ্রের মেয়ে শ্যামলী রানীর বিয়েতে বরপক্ষ জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থেকে আসার সময় যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে ৩০০ টাকা দাবি করে। এতে অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রায় ২ ঘণ্টা বিয়ের বাসটি আটক রাখা হয়। পরে আকুতি মিনতি জানিয়ে ২০০ টাকা দিয়ে পার পায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানান, ওরা (পাহারাদার) দাঙ্গাবাজ এবং জুলুমবাজ। ওদের বিরুদ্ধে কথা বললেই নানাভাবে হেনেস্তার শিকার হতে হয়। ওরা পাহারার নামে নিজেরাই পোস্ট ঘরে মাদকের আসর বসায়। কেউ কেউ মাদক বিক্রির সঙ্গেও জড়িত। ভুক্তভোগীদের আক্ষেপ, জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। তাদের অনুমতি নিয়ে এসব কারবার চালিয়ে যাচ্ছে যারা, তাদের কোনো বিচার নেই!

ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল আলম বলেন, আমার কাছেও নানা অভিযোগ আসছে। ওসি সাহেব এবং নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবার রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, এক সময় ওই স্থানে প্রায়ই অপরাধমূলক কার্যক্রম সংগঠিত হতো। তাই স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শ করে তাদের এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

 
Electronic Paper