রংপুরে বধ্যভূমিতে মিলল মানুষের হাড়
রংপুর অফিস
🕐 ৯:৪২ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ০১, ২০২০
রংপুর নগরীর ঐতিহ্যবাহী টাউন হলের পাশে বধ্যভূমি থেকে মানুষের হাড় ও দাঁতের অংশবিশেষ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার সকালে ওই টাউন হলের পাশের বধ্যভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজের জন্য শ্রমিকরা মাটি খুঁড়লে এসব হাড়গোড় বের হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী টাউন হলটিকে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করত। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে টাউন হল বধ্যভূমি চত্বরে মানুষের ভিড় নামে।
খনন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, মাটিতে ভরাট হওয়া কুয়ার উপরিভাগ কেবল খোঁড়া হয়েছে। পুরো কুয়া খুঁড়লে আরও অনেক কিছু বেরিয়ে আসতে পারে। বধ্যভূমি পরিদর্শনে এসে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির রংপুর সভাপতি ডা. মফিজুল ইসলাম মান্টু বলেন, ?‘এক বিশাল খবর। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মারক এই টাউন হল বধ্যভূমি। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী টাউন হলে টর্চার সেল করেছিল। মুক্তিকামী বাঙালি, মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ মানুষকে ধরে এনে টর্চার সেলে নির্যাতন ও হত্যা করেছিল। মা-বোনদের সম্ভ্রম লুটসহ তাদের হত্যা করে ফেলে দেওয়া হয়েছিল টাউন হলের পাশের কুয়াতে। এই ইতিহাসের কথা এতদিন আমরা সবাই বলছিলাম। হায়েনাদের হাতে নিহত মানুষের হাড়গোড় আজ মিলেছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের মহান ইতিহাস সংরক্ষণ করে অমরগাথা ও স্মারক চিহ্ন জীবন্ত রাখতে চাই।’
সংবাদকর্মী রেজাউল করিম জীবন বলেন, ‘আমার মতো যুবকরা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। কিন্তু ইতিহাস থেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নির্মমতা, হত্যাযজ্ঞ ও তা-বের কথা শুনেছি। টাউন হল টর্চার সেলে এনে মানুষ হত্যা করার ইতিহাস শুনেছি। কিন্তু সেই নির্মমতার শিকার হওয়া মানুষের হাড়হাড্ডি ও দাঁতের অংশবিশেষ স্বচক্ষে দেখতে পেলাম। ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাঁচিয়ে রাখতে এসব হাড়গোড় সংরক্ষণ করা জরুরি।’
এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড শাহাদত হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেনসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের চেতনার সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠকরা বধ্যভূমি পরিদর্শনে আসেন।
গত বছরের ১৬ নভেম্বর ওই স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। ঐতিহাসিক টাউন হল ও আশপাশের সৌন্দর্যবর্ধন বৃদ্ধিসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিটি সংরক্ষণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করছে রংপুর জেলা প্রশাসন। বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ আগামী বছরের জুনে শেষ হবে। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ লাখ টাকা।