ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

অসময়েও তিস্তার ভয়াল রূপ

সুদীপ্ত শামীম, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)
🕐 ৬:৪০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৪, ২০২০

তিস্তার পানি নেমে যাচ্ছে ব্রহ্মপুত্রে। সেই সঙ্গে শুকিয়ে যাচ্ছে গতিপথ হারা প্রমত্ত্য তিস্তা। কিন্তু তবুও পানির তীব্র স্রোতে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে নদী ভাঙন। গত এক সপ্তাহ ধরে এমন ভয়াল রূপ নিয়েছে প্রমত্ত্য তিস্তা। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নে ভাঙনের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি। এরইমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে কয়েকটি গ্রামের সহস্রাধিক বসতঘর। ভাঙনে বিলীন হয়েছে শতাধিক একর ফসলি জমি। রক্ষা পায়নি গাছপালা আর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা। এতে ভাঙন আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন নদী তীরবর্তী জনপদের মানুষ।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ওইসব ভাঙন কবলিত স্থানে স্থায়ী তীররক্ষা প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। তাই আপাতত জরুরি কোনো কাজ করছি না।

জানা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর খেয়াঘাটে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতিনিয়তই তিস্তার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর, ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা। ইতোমধ্যে ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে সতরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুল থেকে নদীর দূরত্ব মাত্র তিনশ মিটার। যেকোনো সময় তিস্তা গর্ভে যেতে পারে বিদ্যালয়টি। আর হরিপুর খেয়াঘাট ভাঙনের কবলে পড়ায় ব্যাহত হচ্ছে নৌ-চলাচল। প্রতিদিন নতুন নতুন ফসলি জমি ও বসতভিটে বিলীন হওয়ায় অনেকেই সরিয়ে নিচ্ছে দোকানপাট, ঘরবাড়ি ও স্থাপনা।

এছাড়াও তিস্তার ভাঙনের কবলে পড়েছে শ্রীপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রীপুর, উত্তর শ্রীপুর, কাপাসিয়া ইউনিয়নের লালচামার ঘাট ও বেলকা ইউনিয়নের নবাবগঞ্জ গ্রাম। ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধ ও অন্যের জমিতে। কেউ আশ্রয় না পেয়ে চলে যাচ্ছেন অন্যত্র।

লালচামার ঘাটের বাসিন্দা মজিবুল হক বলেন, বন্যার আগেও নদীর ভাঙনে বাড়িঘর, ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। এখন আবার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। দফায় দফায় ভাঙনে কখন আমাদের বাড়িঘর গিলে নেয় এ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।

হরিপুর ঘাটের বাসিন্দা আবদুর ছালাম বলেন, ‘ভাঙনের কারণে প্রতিনিয়ত তাদের বাড়িঘর সরিয়ে নিতে হচ্ছে। ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন তাও জানা নেই। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে না উঠতেই নদীর ভাঙনে এখন দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তারা।

হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম জিমি বলেন, তিস্তার ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ। গত কয়েক দিনে হরিপুর ঘাটসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শতাধিক বসতভিটে ও হাজারো বিঘা আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অসংখ্য বাড়িঘর, ফসলি জমি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

নদী বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক সাদেকুল ইসলাম দুলাল বলেন, তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে হাজারো বসতবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। বাপ-দাদার শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে এখন নিঃস্ব পরিবারগুলো। তার দাবি, জিওব্যাগ কোনো সমাধান নয়, ভাঙন রোধে দ্রুত স্থায়ী তীররক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন করার।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, হরিপুর ও শ্রীপুরে স্থায়ী তীররক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এটি আগামী ডিসেম্বর মাসে কাজ শুরু করা হবে। তাই সেই স্থানগুলোতে জরুরি কোনো কাজ করা হচ্ছে না।

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড তৎপর রয়েছে। বরাবরই ভাঙন রোধে নদী তীরবর্তী এলাকায় শুধু অস্থায়ীভাবে বালুর বস্তা ফেলানোর কাজই হয়েছে। তবে এবার ৬টি পয়েন্টে ৪১২ কোটি টাকার প্রকল্পে একনেকে অনুমোদন হয়েছে। এই প্রকল্প আগামী মাসের মধ্যে স্থায়ীবাঁধ নির্মাণসহ পুরো এলাকাকে সুরক্ষিত করা সম্ভব হবে।

 

 
Electronic Paper