ইন্দ্রচাঁদের কাচারি বাড়ি
মেহেদী হাসান উজ্জল, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
🕐 ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২১, ২০২০
সংস্কারের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর জমিদার ইন্দ্রচাঁদ বোথরার কাচারি বাড়ি। অতীত ঐতিহ্যের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জমিদার ইন্দ্রচাঁদ বোথরার এই কাচারি বাড়িটি দীর্ঘদিন উপজেলা ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহার হলেও কর্তৃপক্ষ এ বাড়িটি সংস্কার না করে পাশে একটি উপজেলা ভূমি অফিস ভবন নির্মাণ করে সেখানে উপজেলা ভূমি অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ফলে এই কাচারি বাড়িটি এখন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েছে। যার ফলে দিনের পর দিন অযতœ-অবহেলায় ধ্বংস হতে চলেছে উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ও অতীত ঐতিহ্যের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই কাচারি বাড়িটি।
সরজমিন গিয়ে কাচারি বাড়িটিতে দেখা যায়, ১৮৮৬ সালে নির্মিত এ ভবনটির পাথরে খোদাই করা দুটি বাঘ ও নির্মাণ সাল এবং বাড়ির মালিকের নাম লেখা রয়েছে বাড়ির মূল ফটকে। বাড়িতে দুটি বড় বাঘের ছবি থাকায় এ বাড়িটি বাঘ মার্কা বাসা বলে অত্র এলাকায় পরিচিতি ছিল। জানা গেছে, পৌর এলাকার স্থানীয় ৪নং ওয়ার্ডের পশ্চিম গৌরীপাড়া এলাকার এই বাড়িটির মোট জমি এক একর ৭৩ শতাংশ হলেও এর মধ্যে কিছু জমি বেদখল হয়ে গেছে, বাকি জমিতে ৭ কক্ষ বিশিষ্ট দ্বিতল ভবন, যা প্রস্থে ৩০ ফুট ও দৈর্ঘ্য ২০০ ফুট লম্বা। প্রতিটি দেয়াল ৩০ ইঞ্চি চওড়া চুন-সুড়কি দ্বারা নির্মিত। ভবনটি সংস্কার করা হলে এটি অতীত ঐতিহ্যের নিদর্শন হয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের শিক্ষণীয় বিষয় হওয়ার পাশাপাশি এখানে ডাকবাংলোসহ দর্শন কেন্দ্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে স্থানীয় সচেতন মহল।
উপজেলার প্রবীণ শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের কাছে জানা গেছে, প্রজা সাধারণের যাতায়াতের সুবিধার্থে ছোট যমুনা নদীর পাড়ে এই কাচারি বাড়িটি তৈরি করা হয়। নান্দনিক নির্মাণশৈলীর কারুকার্য দ্বারা এই কাচারি বাড়িটি জমিদার ইন্দ্রচাঁদ বোথরার একটি শখের বাড়ি ছিল। তৎকালীন ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর জমিদার প্রথা বিলুপ্তি হলে এই কাচারি বাড়িটি উপজেলা ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। গত ২০১০ সাল পর্যন্ত এ ভবনটি ছিল উপজেলা ভূমি অফিস। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কার না করার ফলে ভবনটি ধীরে ধীরে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
ভবনটির ছাদ দিয়ে যেমন পানি পড়ে তেমনি দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়েছে। কর্তৃপক্ষ ঐতিহ্যবাহী এ ভবনটি সংস্কার না করে তার পিছনে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করে সেখানে উপজেলা ভূমি অফিসটি স্থানান্তর করায় এই ভবনটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ফুুলবাড়ীসহ অত্র এলাকায় ঐতিহ্যের ধারক লালনকারী ঐতিহ্যবাহী এ ভবনটি অচিরেই সংস্কার করে ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে রক্ষা করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকার সচেতন মহল।
এ বিষয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী কমিশনার ভূমি মোছা. কানিজ আফরোজ বলেন, বিষয়টি নিয়ে উপর মহলে কথা বলা হবে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।