ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কিশোরীকে বৃদ্ধের বিয়ে, ৬ লাখ টাকায় রফা

কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি
🕐 ৯:৩৮ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ০২, ২০২০

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১৭ বছরের কিশোরীকে বিয়ে করেছেন ৬৩ বছরের এক বৃদ্ধ। বাল্যবিবাহের ঘটনাটি উপজেলার গণ্ডি পেরিয়ে পুরো জেলায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় চলছে প্রতিবাদের ঝড়। ৬৩ বছরের ওই বরের নাম আব্দুল্লাহ আল নাসের। ১৭ বছরের কিশোরীর নাম মিম আক্তার। বিয়ের দেনমোহর ধার্য করা হয় এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। ঘটনাটি জানাজানি হলে বর আব্দুল আল নাসেরকে আটক করে এলাকাবাসী। পরে নিতাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুক এবং স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এক সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি রফাদফা করে বরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এলাকাবাসীরা জানান, ঢাকার মিরপুর উত্তর পাইকপাড়ার মৃত সামসুল হকের ছেলে এবং আল নাসের এভিয়েশন সার্ভিসের মালিক আব্দুল্লাহ আল নাসের। হজে লোক পাঠানোর সুবাদে নাসেরের সঙ্গে পরিচয় হয় কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের বাসিন্দা আতিকুল ইসলামের। ৬৩ বছরের বৃদ্ধ আল নাসের বিয়ে করার জন্য আতিককে মেয়ে খুঁজতে বলেন। আতিক নাসেরের মন যোগাতে এক ঘটকের মাধ্যমে নিতাই ইউনিয়নের খোলাহাটি গ্রামের আব্দুল মতিনের নাতনি ১৭ বছরের কিশোরী মিম আক্তারকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দেন। গত ২৭ অক্টোবর নগদ এক লাখ ২৫ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করে ওই বৃদ্ধের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে দেন।

২৮ অক্টোবর ওই বৃদ্ধ প্রাইভেট কারে মেয়েটিকে নিয়ে নানা শশুর আব্দুল মতিনের বাড়ি খোলাহাটি গ্রামে আসলে কৌতূহলী লোকজন বৃদ্ধকে প্রাইভেট কারসহ আটকে রাখে। পরে নিতাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুক একই গ্রামের মোবারক আলীর ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সুরুজ মিয়া, একই গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি সেনা মিয়া, আবুল কালাম কালটু মিয়া, শিমু মাস্টারসহ, কৃষি অফিসে চাকরিরত বিএস আবুল কালাম বেশকিছু প্রভাশশালী ব্যক্তি ছাত্রলীগ নেতা সুরুজের বাড়িতে বৃদ্ধ আব্দুল্লাহ আল নাসেরকে আটকে রাখে। রাতভর সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ করার অজুহাতে নিতাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুকের নামে নামে স্টান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড নীলফামারী শাখার অনুকূলে ৬ লাখ টাকার চেক গ্রহণ করে বৃদ্ধকে ছেড়ে দেন। যাহার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ৫০১১৩০০০০২০ চেক পাতা নম্বর সিএএ ০০০০৪৭৫।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিশোরী মিম আক্তার কিশোরগঞ্জ বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। জন্ম নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী মেয়েটির জন্ম তারিখ ২২-১১-২০০৩ সাল। জন্ম নিবন্ধন নম্বর ২০০৩৭৩৮৪৫৬৯০৩৩৮২৩।

এ বিষয়ে বৃদ্ধ আব্দুল্লাহ আল নাসের বলেন, আমি শরিয়াহ মোতাবেক ওই মেয়েটিকে বিয়ে করেছি। তবে কাবিনামায় দেখা যায় বর কনে ও অন্যান্য সাক্ষীর স্বাক্ষর থাকলেও নিকাহ রেজিস্ট্রারের নাম ও স্বাক্ষর নেই। চেক নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নিতাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুক বলেন, আব্দুল্লাহ আল নাসের একজন প্রভাবশালী ও সম্মানী মানুষ। তিনি মাত্র এক লাখ ২৫ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করে মেয়েটিকে বিয়ে করেন। দেনমোহর কম হওয়ার কারণে তার কাছে দেনমোহর বাবদ ৬ লাখ টাকার চেক গ্রহণ করা হয়েছে। টাকা আমার কাছে গচ্ছিত আছে। এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল আউয়াল বলেন, আমরা খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। তবে চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুক বিষয়টি সমাধান করে দিতে চাওয়ায় পুলিশ চলে আসে।

 
Electronic Paper