ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দিনাজপুর তুলা গবেষণা কার্যক্রমে অচলাবস্থা

তানজেরুল ইসলাম ও এস এ স্বপন মৃধা, দিনাজপুর
🕐 ১১:০৭ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০

দেশের পাঁচটি তুলা গবেষণাকেন্দ্রের মধ্যে দিনাজপুর তুলা গবেষণাকেন্দ্র একটি। এই গবেষণাকেন্দ্রটি থেকে উদ্ভিদ পরাগায়ন, কৃষিতত্ত্ব, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, কীটতত্ত্ব ও উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব-বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার কথা। তবে বহুমুখী সংকট ও প্রতিবন্ধকতায় কেন্দ্রটির তুলা গবেষণা কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। যদিও তুলা উৎপাদন সংক্রান্ত বিবিধ বিষয়ে তুলা উন্নয়ন বোর্ড ১৯৯১ সাল থেকে গবেষণা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। তবে গত ২৯ বছরেও দিনাজপুর তুলা গবেষণাকেন্দ্রের সংকট নিরসন হয়নি।

 

দিনাজপুর তুলা গবেষণাকেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত নথি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮২ সালে সদরপুরে তুলা গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও বীজবর্ধন খামার প্রতিষ্ঠিত হয়। ৪৬.৭১ হেক্টর আয়তনের এই গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানে জনবল প্রয়োজন ২৯ জন। তবে বর্তমান জনবল মাত্র ১১ জন। গবেষণাকেন্দ্রটির পরীক্ষাগারে থাকা অধিকাংশ আসবাবপত্র ব্যবহারের অযোগ্য। গবেষণাগারেপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক দ্রব্য ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ অপ্রতুল। গবেষণাগারে টেকনিশিয়ান সংকট কাটেনি গত দুই যুগেও। বিগত দিনে এই তুলা গবেষণা কেন্দ্রটি থেকে আগ্রহীদের তুলা চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।

তুলা গবেষকদের মতে, দিনাজপুর, রংপুর, পাবনা ও রাজশাহী জেলায় অন্তত ৫০ হাজার হেক্টর তুলা চাষ উপযোগী জমি রয়েছে। এই ৫০ হাজার হেক্টর জমি থেকে বার্ষিক কমপক্ষে ১.৫০ লাখ বেল তুলা উৎপাদন সম্ভব। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য উত্তরাঞ্চলের উপযোগী উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ উদ্ভাবন, আধুনিক তুলা চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের বিকল্প নেই।

অনুসন্ধান বলছে, দেশে তুলা উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়াতে ২০২১ সালের মধ্য ৮ লাখ বেল তুলা উৎপাদনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। বর্তমানে দেশে ৪৭ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ হচ্ছে। আগামী ২০৩১ সালের মধ্য ৫ লাখ হেক্টর জমিতে তুলা চাষের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। তবে ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত দেশে তুলার উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ৪০ হাজার বেইল। এ সময় দেশে তুলার নতুন চাহিদা বেড়েছে অন্তত ৫-১০ লাখ বেইল। আসছে ২০২১ সালের মধ্য তুলার মোট উৎপাদন ৮ লাখ বেইল লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বর্তমান উৎপাদন মাত্র দুই লাখ বেইল। গত তিন বছরে দেশে তুলা উৎপাদন বৃদ্ধি পর্যালোচনা মতে, ‘২০৩১ সালের মধ্য দেশে ৫ লাখ হেক্টর জমি তুলা চাষের আওতায় আনা বেশ চ্যালেঞ্জিং।’ এই চ্যালেঞ্জ মোকবেলায় দিনাজপুরসহ দেশের অন্য চারটি তুলা গবেষণাকেন্দ্রের আধুনিকায়ন ও সংকট নিরসন জরুরি বলে মনে করছেন তুলা গবেষকরা।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. ফরিদ উদ্দিন দৈনিক খোলা কাগজকে জানান, দেশে তুলা চাষে অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র নিয়োগবিধির কারণে বহুমুখী জটিলতা দেখা দিয়েছে। তবে আগামী কয়েক মাসের মধ্য নিয়োগবিধি চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তুলা গবেষণা কেন্দ্রগুলোতে গবেষণা কাজে জনবল সংকট দীর্ঘদিনের সমস্যা। গবেষণা কেন্দ্রগুলোর জন্য, পরীক্ষাগারের জন্য বাজেট যেমন আছে, তেমনি বাজেট স্বল্পতাও আছে।

তিনি আরও বলেন, গত ১০ বছর ধরে আমরা নিয়োগবিধিতে আটকে আছি। এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। নিয়োগবিধি হলে কেউ কেউ লাভবান হয়, কারও ক্ষতি হয়। এমন সব প্রতিবন্ধকতায় সৃষ্ট জটিলতা দীর্ঘদিনের। দেশে বার্ষিক অন্তত ৮০ লাখ বেইল তুলার চাহিদা রয়েছে। আমরা উৎপাদন করতে না পারায় কটন ইনপুর করতে হয় বার্ষিক ২৫ হাজার কোটি টাকার। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে দেশে বার্ষিক তুলা উৎপাদন ছিল মাত্র ৮০ হাজার বেইল। যেটি বর্তমানে ২ লাখ বেইলে পৌঁছেছে।

 

 
Electronic Paper