বিলুপ্তির পথে বীরগঞ্জের মৃৎশিল্প
হাসান জুয়েল, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর)
🕐 ৯:৪১ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০
একদিকে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কদর কমেছে মৃৎশিল্পের, অন্যদিকে জেঁকে বসেছে করোনাভাইরাস মহামারী। সব মিলিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জের মৃৎশিল্পীরা। পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্যবাহী পেশা ধরে রাখলেও তাদের পাশে নেই কেউ। স্বল্প আয়ে অল্প চাহিদায় দিনপাত করছেন তারা। তারপরও স্বপ্ন দেখেছেন সুদিন ফিরে পাওয়ার। তাদের আশা, ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে বাঁচাতে সরকার এগিয়ে আসবে, তাদের সুদিন ফিরবে।
জানা যায়, উপজেলার অদূরে মোহনপুর ইউনিয়নের কুমোরপাড়া গ্রামের বেশির ভাগ পরিবারই মাটির জিনিস তৈরির কাজ করতেন। মাটি দিয়ে হাঁড়ি, খেলনা, ফুলের টব, ডেকচি, কলস, কড়াই, দইয়ের বাটি, মালসাসহ বিভিন্ন ধরনের মাটির জিনিসপত্রে ফুটে ওঠে কারিগরের হাতের অপরূপ কারুকাজ।
সকাল থেকে রাত অবধি ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকত। হাঁটে দারুণ চাহিদা ছিল মাটির তৈরি এসব জিনিসপত্রের। কিন্তু এখন আর সেই জৌলুস নেই। বেড়েছে কাঁচামালের দাম। সে অনুপাতে বাড়েনি পণ্যের দাম। এদিকে মাটির স্থান দখল করে নিয়েছে সস্তা দামের দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র।
আশানুরূপ লাভ না হওয়ায় এই পেশা থেকে সরে গেছেন অনেকেই। কিন্তু এ পেশাই যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন, তাদের জীবনযাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
মৃৎশিল্পীরা জানান, আগের মতো লাভ না হওয়ায় কর্মীদের ঠিকমতো ভরণ-পোষণ দিতে পারছেন না। এতে একদিকে কারিগররা সংকটে পড়ছে পরিবার নিয়ে, অন্যদিকে দেশ হারাতে বসেছে নিজস্ব ঐতিহ্য। মৃৎশিল্পীদের মধ্যে আন্ধারু কুমার পাল বলেন, ‘সবাই নাম নিয়া যাছে বাহে! কিন্তু কিছুই ফের দেয় না হামাক; বেলে করোনাভাইরাস নাকি আইছে, কি করিমো আর কি খামো হামরা আর কোনঠে না যামো’।
এলাকার অন্যরা মনে করেন, দেশের অন্যতম ঐতিহ্য মৃৎশিল্প বাঁচাতে কেউ না কেউ এগিয়ে আসবেন। তারা তাদের জীবন ও ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ ব্যাপারে অত্র গ্রামের কুমোর সমিতির সভাপতি রাজেশ কুমার পাল বলেন, ‘বাপ-দাদার কাছে শেখা আমাদের এই জাত ব্যবসা আজও আমরা ধরে রেখেছি। এই কুমোরপাড়ার আশপাশের এলাকায় এক সময় মাটির তৈরি জিনিসের ব্যাপক চাহিদা ছিল, কিন্তু বর্তমানে বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ সংকটের মুখে পড়েছে এ মৃৎশিল্পটি।’
বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল কাদের বলেন, ‘আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিল্পীদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারলে মৃৎশিল্পের বিদেশে বাজার তৈরি করা সম্ভব। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৃৎশিল্পের প্রসারে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।’