রংপুরে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা
সাইফুল ইসলাম, রংপুর
🕐 ১২:৩৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২০
স্কুল শিক্ষিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে রংপুর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার পর ওই শিক্ষিকাকে রংপুর মেট্রো কোতোয়ালি থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়। এদিকে ছাত্রলীগ নেতা রনির পক্ষের নেতাকর্মী থানা ঘেরাও করে মামলা প্রত্যাহারের চাপ দেয়। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে অস্বস্তিতে পড়েন রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও দেয়ালে পোস্টারিংয়ের মাধ্যমে রনির বিচার দাবি টপ অফ দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। শনিবার বিকালে মামলাটি রেকর্ড করা হয়। পরে পুলিশ বাদীকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। বর্তমানে বাদী নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন এবং দ্রুত আসামিকে গ্রেফতারের দাবি জানান। এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশ কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুর রশিদ জানান, মামলা রেকর্ড হয়েছে। আসামিকে গ্রেফতারে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, ২০১৭ সালে রংপুর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনির সঙ্গে মেয়েটির পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মেয়েটি জানায়, রনি তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ভারত, ঢাকা, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে। বিভিন্ন সময় কাজের কথা বলে ১৮ লাখ টাকা নেয়।
বিয়ের কথা বললে টালবাহানা শুরু করে। তার বন্ধুবান্ধব ও স্বজনদের চাপে ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল বিয়ের কথা বলে নীলফামারীতে নিয়ে যায়। নীলফামারী জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সজল কুমারের বাসায় নিয়ে ভুয়া কাজী এনে তাকে বিয়ে দেখানো হয়। এরপর রাতে বাসরঘর বানিয়ে উপর্যুপরি ধর্ষণ করে।
তিনি বলেন, রনি এরই মধ্যে ছয় বছর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছে। ফলে সামনে ছাত্রলীগে জায়গা না পাওয়ার আশঙ্কায় জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পেতে মরিয়া। সে জন্য ২০ লাখ জোগাড় করে দিতে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি প্রদান করে।
এদিকে ভুয়া বিয়ের কথা জানার পর তিনি রনিকে আবারও বিয়ের জন্য চাপ দেন। চলতি বছরের ৫ জুনও তাকে কেরানিপাড়ার বাসায় নিয়ে রাতযাপন করে এবং ধর্ষণ করে। রনি কথা দেয় তাকে স্ত্রীর অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে বাসায় নিয়ে যাবে। কিন্তু টালবাহানা করে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে।
মেয়েটির অভিযোগ, রনি তাকে তার জীবন থেকে সরে যাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেয়। বলে, প্রশাসন তার কথামতো চলে। এত কিছুর পরও রনির সঙ্গে সংসার করতে মিনতি জানান মেয়েটি। গত ১২ জুলাই রংপুর নগরীর গনেশপুর ক্লাব মোড় এলাকার ফুফুর বাড়িতে মেয়েটিকে নিয়ে যায় রনি। সেখানে গিয়ে বলে তার সঙ্গে কোনো বিয়ে হয়নি, রেজিস্ট্রি হয়নি, কোনো কাবিননামাও নেই। এরপর তার সহযোগীদের দিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
এর আগে ভুক্তভোগী মেয়েটি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি লিখিতভাবে জানালে তাকে থানায় অভিযোগ করতে বলা হয়। এরপর থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করলে মামলা রুজু করে রংপুর মেট্রো পুলিশ।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৮ ডিসেম্বর রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে মেহেদী হাসান রনিকে সভাপতি করে এক বছর মেয়াদি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু সে অবৈধভাবে ছয় বছর ধরে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে বলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন। রনির বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাজিতপুর ফতেহপুর গ্রামে। বাবার নাম আবু বক্কর।
গতকাল রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল বলেন, অপরাধ আর অপরাধী এক নয়। তিনি অপরাধীর বিচার দাবি করেন। রংপুর জেলা আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মতামত দিতে অস্বস্তিবোধ করেন।
অন্যদিকে রংপুরে রনির ফাঁসি দাবি করে দেয়ালে পোস্টার লাগানোর বিষয়ে রংপুর জেলা যুবলীগের নেতাকর্মীরা বলেন, কে বা কারা পোস্টারিং করেছে, তা তাদের জানা নেই। তবে রংপুরবাসী অপরাধীর বিচার দাবিতে সোচ্চার হচ্ছেন বলে জানান রংপুর জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক বাবু লক্ষীন দাস ও কামরুজ্জামান শাহিন।