ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রংপুর আবারও তামাকের অবৈধ বিজ্ঞাপনে সয়লাব

সুশান্ত ভৌমিক, রংপুর
🕐 ১০:০৮ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১০, ২০২০

রংপুর মহানগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে আবারও তামাকের অবৈধ বিজ্ঞাপন আর পুরস্কার-প্রণোদনায় সয়লাব হয়ে গেছে। অথচ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী এসব বিজ্ঞাপন ও পুরস্কার-প্রণোদনা নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এছাড়া তামাক আইন লঙ্ঘন করে মহানগরীর পাবলিক প্লেসগুলোতেও দেদারসে চলছে ধূমপান। ফলে তামাকের ধোঁয়ায় রংপুর সিটিতে প্রতিনিয়ত ঘটছে স্বাস্থ্যহানি। তাই নগরবাসী রংপুরে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

রংপুর মহানগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, তামাকপণ্যের সব বিজ্ঞাপন প্রচারণা আইনগত নিষিদ্ধ হলেও মহানগরীর সর্বত্রই অবাধে চলছে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন। ভোক্তা ও বিক্রেতাদের নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের তামাক ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে উপহার।

গেল বছর রাজশাহীর বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র রংপুর অফিসের একটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে- রংপুর মহানগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের ৪ হাজার ৮৪৫টি দোকানে বিভিন্ন ধরনের তামাকপণ্য বিক্রি করা হয়। এসব দোকানের অধিকাংশগুলোতেই লঙ্ঘিত হচ্ছে এ আইন। প্রায় অর্ধেক দোকানে বিভিন্ন সিগারেট কোম্পানি ডামি সিগারেটের প্যাকেটে ডেকোরেশন করে দেওয়া হয়েছে।

দোকানে দোকানে শোভা পাচ্ছে সিগারেট কোম্পানিগুলোর হ্যান্ডবিল, স্টিকার ও লিফলেট। দোকানগুলোর দোকানিকে তারা দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের উপহার। এর মধ্যে রয়েছেÑ সুদর্শনীয় শো-কেস, দোকানির ছবিসহ পান-সিগারেটের বাক্স, গেঞ্জি, ছাতা, ঘড়ি, মগ ইত্যাদি। এছাড়া সিগারেট-বিড়ি কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোম্পানির লোগো-সংবলিত শার্ট-প্যান্ট পরেও চালিয়ে যাচ্ছে প্রচারণা।

অথচ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ সংশোধন) আইন, ২০০৫ (২০১৩) এর ধারায় বলা আছে- বিক্রয়স্থলে তামাকপণ্যের প্যাকেট বা মোড়ক সাদৃশ্য কোনো দ্রব্য, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড বা অন্য কোনোভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা যাবে না। এছাড়া তামাক দ্রব্য ব্যবহারে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে কোনো উপহার, দান, পুরস্কার, বৃত্তি প্রদান আইনত দণ্ডনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আইনের এ ধারা অমান্যকারীকে ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদ- বা অনধিক ১ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত করার বিধান রয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মহানগরীর বিভিন্ন পাবলিক প্লেস যেমন হাসপাতাল চত্বর, বাস টার্মিনাল, যাত্রী ছাউনি, গণপরিবহন, সরকারি বিভিন্ন অফিস, আদালত চত্বর, আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, খাবার হোটেল ইত্যাদিতে যত্রতত্র করা হচ্ছে ধূমপান।

রংপুরের তামাক নিয়ন্ত্রণ কোয়ালিশনের ফোকাল পার্সন সুশান্ত ভৌমিক বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের জন্য মহানগরীর অভ্যন্তরে তামাকপণ্যের অবৈধ বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পাবলিক প্লেসে ধূমপান বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান মিজু বলেন, ‘রংপুর অঞ্চলে তামাকের চাষ সবচেয়ে বেশি হয়। কাজেই এ এলাকা তামাকমুক্ত করা খুব চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ। তারপরও সবার সঙ্গে পরামর্শ করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে কাজ করব।’

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের বিষয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আসিব আহসান বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

কোথাও আইনটি লঙ্ঘিত হলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেল জরিমানা করা হবে।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৩ অক্টোবর তামাকপণ্যের বিক্রয়কেন্দ্রে অবৈধ বিজ্ঞাপন সরবরাহ না করা এবং নগরীতে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপন অপসারণে তামাক কোম্পানিগুলোর (ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল এবং আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানি) রংপুরের পরিবেশক/সত্ত্বাধিকারী বরারর নোটিস জারি করেছিলেন রংপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি)। কিন্তু তারপরও বহুজাতিক এ তামাক কোম্পানিগুলোর অবৈধ বিজ্ঞাপন-প্রণোদনা বন্ধ হয়নি।

 
Electronic Paper