দোড়গোড়ায় পুলিশি সেবা
সুশান্ত ভৌমিক, রংপুর
🕐 ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১০, ২০২০
‘আমার কাছে আপনার আসার প্রয়োজন নেই, আমি আপনার কাছে আসছি। আপনার সমস্যা কী বলুন আমরা সমাধান করব।’ এই সেøাগানে পুলিশি সেবাকে মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন রংপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) বিপ্লব কুমার সরকার বিপিএম (বার), পিপিএম।
সেবাপ্রত্যাশীরা যাতে সপ্তাহের প্রতিদিনই ঘরে বসে সেবা পান, এজন্য ‘বিট পুলিশিং’ কার্যক্রম বাড়িয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তা (এসআই বা এএসআই) প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে বসছেন। তার উপস্থিতিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাৎক্ষণিক বসে স্থানীয় অনেক সমস্যার সমাধান করেছেন। ফলে ছোটখাটো দ্বন্দ্ব-সমস্যায় সাধারণ মানুষকে অভিযোগ নিয়ে থানায় যেতে হচ্ছে না।
রংপুর জেলাকে ৭৬টি বিট পুলিশিংয়ে ভাগ করে চলছে এ কার্যক্রম। সপ্তাহে একদিন বিট অফিসারদের তদারকির (বিট অফিসে যাওয়া) নিয়ম থাকলেও এসপি বিপ্লব তার জেলার কর্মকর্তাদের প্রতিদিন হাজির হওয়ার নিয়ম করেছেন। এতে ছিনতাই, মাদক, জুয়া খেলা বন্ধসহ বিভিন্ন অপরাধ কমেছে। পাশাপাশি পুলিশের প্রতি বাড়ছে মানুষের আস্থা। এ কথা জানান পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার।
তিনি জানালেন তার এই বিস্তৃত ‘বিট পুলিশিং’ কার্যক্রম শুরু করেন তিনি যখন ঢাকায় ছিলেন। ঢাকার মোহাম্মদপুরে প্রথমে বিট পুলিশিংয়ের কার্যক্রমের শুরু। তখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার ছিলেন বর্তমান আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। ঢাকার অভিজ্ঞতাই তিনি এখন রংপুরে কাজে লাগাচ্ছেন বলে জানালেন এসপি বিপ্লব কুমার। রংপুর জেলার পৃষ্ঠা ১১ কলাম ৪
দোড়গোড়ায় পুলিশি সেবা
এসপি বলেন, ৭৬টি বিটের জন্য রেজিস্ট্রার ছাপানোসহ পাশাপাশি বিভিন্ন কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এখন পুরোদমে চলছে সেবা কার্যক্রম। এই কার্যক্রমে নাগরিকরা কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে জানতে চাইলে বিপ্লব কুমার বলেন, ‘ছোটখাটো সমস্যায় নাগরিকদের থানায় আসতে হবে না। বিশেষ করে যেগুলো স্থানীয় পর্যায়ে বসেই মীমাংসা করে দেওয়া যায় অথবা পুলিশি সেবার জন্য থানায় আসার প্রয়োজন পড়ে না। আবার অনেককে প্রত্যন্ত এলাকা কিংবা দূর থেকে থানায় আসতে হয়। তাই আমাদের অফিসাররা এখন প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে বসছেন। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে একদিন বসার কথা। আমার জেলায় এই সেবা প্রতিদিন চলবে। তাই একজন অফিসার প্রতিদিন ‘বিট পুলিশিং’ অফিসে গিয়ে বসছে।
ঘরে সেবা পৌঁছে দেওয়ার বিট পুলিশিং জোরদারের পর জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো হয়েছে বলে জানান এসপি বিপ্লব। তিনি বলেন, কোথাও কোনো বড় ধরনের সমস্যা নেই। ট্র্যাডিশনাল যেসব অপরাধ যেমন- জমিজমা নিয়ে গ্রামে-গঞ্জে মারামারি, এসব কিছু আছে। তবে কোনো ঘটনার আগে যদি সেখানে পুলিশের হস্তক্ষেপ হয়ে যায়, তাহলে অপরাধ করার আগে মানুষ দুবার ভাবে। এ কারণে নাগরিকদের সব সময় বলছি, কোনো ছোটখাটো ঘটনা হলে আগে আমাদের জানান, যাতে আমরা একটা মীমাংসা করে দিতে পারি।
জনবান্ধব ও জনপ্রিয় পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে খ্যাতি রয়েছে পুলিশের এই কর্মকর্তার। ২১তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের এই কর্মকর্তা রংপুর জেলা পুলিশে যোগদানের আগে ২০১৩ সালের ৭ এপ্রিল থেকে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখায় রেকর্ড ২৪ বার শ্রেষ্ঠ উপ-কমিশনার (ডিসি) হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন বিপ্লব কুমার। পুলিশের রংপুর রেঞ্জের শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার নির্বাচিত হয়েছেন রংপুর জেলার পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার। চতুর্থ বারের মতো শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপারের পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
এছাড়া ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশের সর্বোচ্চ পুরস্কার দুবার বিপিএম ও একবার পিপিএম পেয়েছেন।
বিট পুলিশিংয়ে বিটের কর্মকর্তাদের মনিটরিং করেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিট অফিসারদের জবাবদিহির বিষয়ে এসপি বিপ্লব বলেন, আমাদের কাছে যখন কোনো ভুক্তভোগী ফোন করে, তখন তার কাছে জানতে চাওয়া হয় তিনি বিট অফিসারকে ফোন করেছিলেন কি-না। এতে সহজে সেবা পাওয়ার বিষয়টি সাধারণ মানুষ জানতে পারে। পুনরায় যদি আমাদের কাছে অভিযোগ আসে, তাহলে বিট অফিসার দায়বদ্ধ হবেন। কারণ আমাদের কাছে পুনরায় ফোন আসা মানে বিট অফিসার ঠিকমতো কাজ করছেন না।
বিট পুলিশিং সেবা এবং মোবাইল ফোন নম্বর সহজে সবার কাছে পৌঁছে দিতে কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন জানতে চাইলে এসপি বিপ্লব বলেন, আমরা এ-সংক্রান্ত ব্যানার গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় লাগিয়ে দিয়েছি। আবার যারা বিট অফিসে বা ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আসছে তাদের মোবাইল ফোনে নম্বর দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তার এই উদ্যোগের লক্ষ্য সম্পর্কে এসপি বিপ্লব কুমার বলেন, কোনো অপরাধ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনা সংঘটনের আগেই মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাব এবং তাদের জানমাল রক্ষার পাশাপাশি পুলিশি সেবা দেব। কোনো ঘটনা ঘটার পর কী ব্যবস্থা নেব এমন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি না। ঘরে ঘরে পুলিশি সেবা পৌঁছে দেওয়া, সাধারণ মানুষের মধ্যে পুলিশ ভীতি দূর করা এবং জনগণ ও পুলিশের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরির চেষ্টা করছি। এতে দুর্নীতির সুযোগ কমার পাশাপাশি পুলিশি সেবাটা সহজেই মানুষের কাছে চলে যাবে।