ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

হাঁড়িভাঙ্গায় ২২৫ কোটি টাকার স্বপ্ন

সুশান্ত ভৌমিক, রংপুর
🕐 ৯:৫৩ অপরাহ্ণ, জুন ২৯, ২০২০

`আল্লায় দেচে আম ভালো হইচে। এবার আম ব্যাচেয়া মাইনসের ইনের টাকা শোদ করিম। হাঁড়িভাঙ্গা আম সুস্বাদু হওয়ায় চাহিদা দিন দিন বাড়েছোল। গত সপ্তাহে ত্রিশ হাজার আট ব্যাচাচু। আরো আম পারা বাকি আছে। এবার হাঁড়িভাঙ্গা আম ভালো হইচে, গাছ দেকিয়া মনটা জুড়ি যায় বাহে।’

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের পদাগঞ্জ এলাকার হাসান মিয়া। ওই এলাকায় হাসান মিয়ার মতো আরও অনেকেরই আমবাগানজুড়ে গাছে গাছে দোল খাচ্ছে হাজার হাজার হাঁড়িভাঙ্গা। এই আম যেন তাদের মনে আনন্দ উচ্ছ্বাসের ঢেউ ছড়াচ্ছে। এ কারণেই রংপুর অঞ্চলের আম চাষিরা হাঁড়িভাঙ্গাকে ঘিরে ২২৫ কোটি টাকার বিকিকিনির স্বপ্ন বুনছেন। 

বাংলাদেশের একমাত্র আঁশহীন এই হাঁড়িভাঙ্গা আম বেশ সুস্বাদু ও রসালো। স্বাদে গন্ধেও অসাধারণ। অতি সুমিষ্ঠ আঁশহীন হাঁড়িভাঙ্গা আম মুখে নিলেই মনে হবে অমৃত কোনো স্বাদ। পুষ্ট হাঁড়িভাঙ্গার চামড়া কুচকে গেলেও সহজে পচন ধরে না। এ কারণেই হাঁড়িভাঙ্গা আম সারা দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এখন সমাদৃত বিশ^জুড়ে।

দিন দিন এই আমের চাহিদা দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশেও সাড়া ফেলেছে। এক সময়ের আমখ্যাত রাজধানী রাজশাহীর পর এখন হাঁড়িভাঙ্গা আমের জন্য প্রসিদ্ধ রংপুর। যখন দেশের অন্যান্য স্থানের আম শেষের পথে ঠিক সেই মুহূর্তে বাজারে আসতে শুরু করেছে হাঁড়িভাঙ্গা আম। জুনের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে হাঁড়িভাঙ্গা আম যাচ্ছে রংপুর অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

হাঁড়িভাঙ্গা আমের বদৌলতে বদলে গেছে পদাগঞ্জের মানুষের অর্থনৈতিক ভাগ্য। নফল উদ্দিন পাইকার নামে এক বৃক্ষবিলাসী মানুষের হাত ধরে এই এলাকাতেই শুরু হয়েছিল হাঁড়িভাঙ্গা আমের গোড়াপত্তনের ইতিকথা। পরবর্তীতে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়।

১৯৯২ সালে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম হাঁড়িভাঙ্গা আমের চারার সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনে মনোনিবেশ মিঠাপুকুরের আখিরাহাট গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সমবায় কর্মকর্তা আবদুস সালামের। প্রথম বছরেই তার আম বাগান থেকে অভাবনীয় সাফল্য দেখে অনুপ্রাণিত হন পাশর্^বর্তী পীরগঞ্জ, বদরগঞ্জ ও বিস্তীর্ণ মিঠাপুকুর উপজেলার আম চাষিরা। শুরু হয় উচাবালুয়া, শ্যামপুর, হেলেঞ্চ, পাইকারেরহাট, জারুল্লাপুর, খোড়াগাছ, গোপালপুর, দুর্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে। এসব এলাকায় এমন একটি বাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে বাড়ির আঙ্গিনায় এ হাঁড়িভাঙ্গার গাছ নেই। মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জে সবচেয়ে বেশি হাঁড়িভাঙ্গা আম উৎপাদান হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, হাঁড়িভাঙ্গা আম গাছ থেকে পারা শুরু হয়েছে চলতি জুনের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে। অনেকেই প্রচ- গরম এবং প্রতিকূল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করে নির্ধারিত সময়ের আগেও  বাণিজ্যিকভাবে এই আম বিক্রি শুরু করেছেন। এবার হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। সব কিছু ভালোভাবে হলে শুধু হাঁড়িভাঙ্গা আম বিক্রি করে রংপুরের চাষিরা গড়ে অন্তত ২২৫ কোটি টাকার ওপর তুলতে পারবেন বলেও ধারণা দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্যান বিশেষজ্ঞ জানান, এবার রংপুর জেলায় ৩ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে আমের ফলন হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙ্গার ফলন হয়েছে ১ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। গত বছর প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছিল ৯ দশমিক ৪ মেট্রিক টন। এবার গত বছরের চেয়ে শুধু হাঁড়িভাঙ্গার উৎপাদন হতে পারে দেড় হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে গেছে।

তিনি বলেন, এ বছর ২২৫ কোটি টাকার আম বিক্রির আশা স্থানীয় আম চাষিদের। মৌসুমের শুরুতে দাম কিছুটা কম থাকলেও বর্তমানে প্রতি কেজি হাঁড়িভাঙ্গা আম সর্বনিম্ন ৪০ টাকা থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে রংপুর অঞ্চলে হাঁড়িভাঙ্গা আমের ফলন বেশি হলেও ফজলি, আশ্বিনি,  সাদা ন্যাংড়া, কালা ন্যাংড়া, কলিকাতা ন্যাংড়া, মিশ্রীভোগ, গোপাল ভোগ, আম্রপলি, সাদারুচি, চোচা, আঁটিসহ হরেক প্রজাতির আম উৎপাদন হয়ে আসছে। এসব আমের ভিড়ে এখন সবচেয়ে বেশি চাহিদা হাঁড়িভাঙ্গার। একটি হাঁড়িভাঙ্গা আমের ওজন ২০০ থেকে সাড়ে ৪০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।

 
Electronic Paper