করোনা সংকটে জলঢাকার ওসির মমতার হাত
আবেদ আলী, জলঢাকা, নীলফামারী
🕐 ১০:১৮ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৯, ২০২০
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের শুরু থেকে জলঢাকা পৌরশহরসহ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে নানান সচেতনতার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে নিরলসভাবে কাজ করে চলছেন নীলফামারীর জলঢাকা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান।
স্বজনদের ফেলে যাওয়া লাশ দাফনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। ঘটনাটি ছিল ৯ জুন। জলঢাকা উপজেলার উত্তর দেশীবাই বসুনিয়া পাড়ার শরিফুল ইসলামের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (২৫) করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। রংপুর হাসপাতাল থেকে মাইক্রোবাসে করে নিয়ে এসে জলঢাকার বঙ্গবন্ধু চত্বরে লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যান স্বামী শরিফুল ও স্বজনরা। খবর পেয়ে তিনি ছুটে যান সেখানে।
মৃতদেহ দাফনের বিষয়ে মৃত মনোয়ারা বেগমের স্বামী ও পিতার পরিবারে যোগাযোগ করা হলে তারা লাশ দাফন করতে অস্বীকৃতি জানান। পরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দুইজন ইমাম দ্বারা মনোয়ারার মৃতদেহ পৌরসভার কেন্দ্রীয় কবরস্থানে ধর্মীয় বিধান অনুসারে দাফন সম্পন্ন করেন ওসি মোস্তাফিজুর রহমান। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণে বাজার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে চতুর্ভুজ আকৃতি চিহ্ন দেওয়া হয়েছে যাতে ক্রেতারা এতে অবস্থান করে প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে পারেন।
শুধু এটাই নয়, তিনি করোনার এই সংকটময় দিনে পত্রিকা হকারসহ অসহায় দুস্থদের খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন খাদ্যসামগ্রী। এছাড়াও জাতীয় সেবা নম্বর ৯৯৯ থেকে খাদ্য সহায়তা চেয়ে ফোন করা ব্যক্তিদের পরিচয় গোপন রেখে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া, হোম কোয়ারান্টিন নিশ্চিত করা এবং পর্যবেক্ষণে রাখা, প্রয়োজন অনুসারে কোয়ারান্টিনে থাকা পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো, করোনা আক্রান্ত রোগীদের খোঁজ-খবর রাখা ও তাদের পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ, করোনায় এবং উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তিদের দাফন কার্য সম্পন্ন অব্যাহত রেখেছেন জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশনায়। চরম ঝুঁকির মধ্যেও পুলিশের প্রত্যেক সদস্যদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এমনকি সকল প্রকার ছুটি বাতিল করে মানবিক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত রয়েছেন তারা।
নীতি আদর্শের কাছে হার মানতে রাজি নন ওই ওসি মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি গত ৩০ মার্চ, ২০১৯ জলঢাকা থানায় যোগদানের পর থেকেই থানায় দালালমুক্ত ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেন চুরি, জুয়া এমনকি মাদকের ব্যবসা। এমন অপরাধীদের সঙ্গে যেন কোনো আপস নেই তার। তবে কোনো নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়, সেদিক খেয়াল রেখে পারিবারিক ও জমি-সংক্রান্ত বিষয়ে ঝগড়া বিবাদের অভিযোগগুলো তিনি থানার গোল ঘরে বসে বেশিরভাগই নিষ্পত্তি করে দেন। যার ফলে এই থানায় মামলার সংখ্যা অনেকটাই কম।
থানা অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমানকে নম্রভদ্র ও অত্যন্ত মানবিক একজন মানুষ হিসেবে উল্লেখ করে জলঢাকা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ বাহাদুর জানান, তিনি জলঢাকায় আসার পর থেকে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন ফলে এই থানায় অনেকটাই পরিবর্তন ঘটেছে। করোনাকালীন সময়ে পুলিশকে মানুষের পাশে থাকার বিষয়টি দেখেছি।
মানবিক নানান কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন তারা। মানুষ থানা প্রশাসনের কাক্সিক্ষত যে সেবা পাওয়ার সেটা তারা পাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত থানায় কোনো নিরীহ মানুষ হয়রানির খবর পাওয়া যায়নি। থানা অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, সেবাই পুলিশের ধর্ম, সেই আলোকে কাজ করে যাচ্ছি। পুলিশের সেবা জনগণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের ঘোষিত দুর্নীতিমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ।