ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নীলফামারীতে লকডাউনে বিপাকে মুরগীর খামারীরা

মোশাররফ হোসেন, নীলফামারী
🕐 ১:৫২ অপরাহ্ণ, মে ২৬, ২০২০

নীলফামারীতে করোনা সংক্রমণে পাইকারী বাজারে সব ধরনের মুরগী ও ডিমের দাম অস্বাভাবিক ভাবে কমেছে। এতে বিপাকে পড়েছে জেলার ছয় উপজেলায় ১ হাজার ৫৬৬ খামারী।

জেলা শহরের নিউবাবু পাড়ার মুরগীহাটি মহল্লার জীবন পোল্ট্রি ফার্মের মালিক জীবন মিয়া জানান, এক মাসের ব্যবধানে সব ধরনের মুরগির দাম প্রতি কেজিতে ৩০-৪০ টাকা ও ডিমের দাম প্রতি হালিতে ১২ টাকা কমে ২৪ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে। গত মার্চে ৩৬ টাকা প্রতি হালি ডিম বিক্রি হয়েছিল। এ ছাড়াও করোনার শুরুর আগে সোনালী মুরগী ২১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল। এ জাতের মুরগী এখন ১৬০-১৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ৪০টাকা লোকশান গুনতে হচ্ছে। এ ছাড়াও ব্রয়লার মুরগীর কেজি প্রতি ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। এতে প্রতি কেজিতে ৩০ টাকা লোকশান গুনতে হচ্ছে।

ডোমারের ফার্ম বাজারের মুরগীর খামারী মো. ওয়াহেদ আলী তুফান জানান, দুইটি খামারের প্রায় ছয় লাখ ৯৫ হাজার ব্রয়লার জাতের মুরগী লকডাউনে পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। এতে ক্ষতি হয়েছে পাঁচ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।

সদরের চড়াইখোলা ইউনিয়নের মোল্লা পাড়ার নাফিজা খামারের মুরগী খামারী নাহিদ হোসেন জানান, আমার দুইটি খামারের ব্রয়লার মুরগীর পরিমান ছিল প্রায় তিন হাজার। লকডাউনে পরিবহন বন্ধ থাকায় এসব মুরগী স্থানীয়ভাবে বিক্রি করতে গিয়ে চার লাখ ৭০ হাজার টাকা লোকশান গুনতে হয়েছে।

জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের চড়চড়াবাড়ী গ্রামের খামারী আফজালুল হক বিপ্লব জানান, রানীক্ষেত রোগ দেখা দেওয়ায় আমার খামারে প্রায় ১২ হাজার মুরগি পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। এই বিপদ কেটে উঠতে না উঠতেই দেশজুড়ে আবার মহামারী আকারের দেখা দেয় করোনাভাইরাস। করোনা সংক্রমণ রোধে দেশে সব ধরনের যানবাহন বন্ধ থাকায় বাজারে ডিম ও মুরগীর বাজার নিন্মমুখি হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খামারীরা।

জেলা প্রাণিসম্পদ সূত্র জানায়, জেলায় ১ হাজার ৫৬৬ মুরগির খামার রয়েছে। এর মধ্যে সোনালী মুরগির খামার রয়েছে ৪৬৭, লেয়ার ৪৪৫, ব্রয়লারের খামার রয়েছে, ৫৭৮ ও দেশি মুরগির ৭৬ টি।

নীলফামারী পৌরসভার হাড়োয়া মহল্লার খামারি বাঁধন মিয়া জানান, দুই দফায় রাণীক্ষেত রোগে খামার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গত মার্চ মাসে আবার এক হাজার সোনালী মুরগির বাচ্চা পালন শুরু করি। চলতি মাসের দ্ধিতীয় সপ্তাহ থেকে বিক্রি করা যাবে বলে আশা করেন তিনি। কিন্ত করোনার প্রভাবে এতেও লোকশান গুনতে হবে বুঝি। সরকারিভাবে আর্থিক প্রণোদনা পেলে এই লোকশান থেকে কেটে উঠা যাবে বলে মনে করেন তিনি।
পরিবেশক ইকবাল আহমেদ জানান, নানা কারনে খামারীরা বার বার ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে, এতে খামারীদের সঙ্গে ডিলারদেরও প্রভাব পড়ছে।

প্রাকৃতিক প্রভাবে জেলায় শতকরা ৮০ ভাগ মুরগির খামার বন্ধের পথে। তিনি জানান, করোনার প্রভাবে বর্তমানে পোল্ট্রি শিল্প মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। খামারে মুরগির ডিম আসছে কিন্তু বিক্রি হচ্ছে না। এসব মিলিয়ে খামারিরা বিপাকে পড়েছে। সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের সহজ সর্তে ঋণ দেওয়ার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করায় খামারিদের হয়তো কিছুটা উপকার হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোনাক্কা আলী জানান, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সরবারহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় খামারিরা তাদের উৎপাদিত মুরগি ও ডিমের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ জন্য করোনা সংকটে সরকার খামারীদের বিশেষ প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন। উপজেলা পর্যায়ে খামারীদের তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করি দ্রুত তাদের সমস্যা সমাধান হবে।

 

 
Electronic Paper