ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

গঙ্গাচড়ার বেনারসি পল্লী কর্মহীন

সুশান্ত ভৌমিক ও নির্মল রায়, গঙ্গাচড়া, রংপুর
🕐 ১২:৪৪ অপরাহ্ণ, মে ১৯, ২০২০

চলমান করোনা পরিস্থিতিতে পথে বসার উপক্রম হয়েছে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেনারসি পল্লীর তাঁত শিল্পের। উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের হাবু গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। তাঁতিপাড়ার বেশিরভাগ মানুষ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁত মেশিনের মাকু, সানা, দক্তি আর নরাজের ঠক্ ঠক্ শব্দ শুনতে অভ্যস্ত। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চ থেকে টানা লকডাউনের এই দীর্ঘ সময়ে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে গোটা গ্রামজুড়ে।

গত বছরেই ঈদের আগে দারুণ কর্মব্যস্ত সময় কাটিয়েছে এখানকার তাঁতিরা। লকডাউনে থমকে যাওয়া তাঁত শিল্পের করুণ আর্তনাদ শোনা গেল কয়েকজন তাঁত শিল্পীর বক্তব্যেই। বেনারসি শাড়ির কারিগর মনোয়ারুল বলেন, শাড়ির ডিজাইন ভেদে প্রতিটির জন্য ১২শ’ থেকে ১৮শ’ টাকা মজুরি পেতাম। কিন্তু গত দুই মাস থেকে বাড়িতে বসে আছি, কাজ নাই তাই পেটেও ভাত নেই।

শাড়ি প্রতি ৬০ টাকা মজুরিতে চরকায় সুতা তোলার কাজ করে রাশেদা। কাজ বন্ধ থাকায় অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনো রকমে দিন কাটছে তার।
মনোয়ারুল, রাশেদার মতো কর্মহীন হয়ে আছেন গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক তাঁত শ্রমিক। এসব শ্রমিকের মধ্যে অনেকেরই বাসায় এখন চুলোতে আগুন জ¦লচ্ছে না। তারা সকলেই এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের আকুতিÑ সরকার বা সমাজের বিত্তবানদের কাছে আমরা ভিক্ষা চাই না, আমাদের এই তাঁত শিল্পকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন।

লকডাউনের প্রভাব পড়েছে বেনারসি পল্লীজুড়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন শো-রুমেও। ক্রেতাশূন্য শো-রুমেগুলোতে পড়ে আছে বেনারসি, নীট কাতান, রিমঝিম কাতান, রেশমি কাতান, জামদানিসহ বাহারী নাম আর ডিজাইনের শাড়ি। চলমান পরিস্থিতিতে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আর্থিক অনুদান বা সরকারি প্রণোদনার জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ব্যবসায়ী ও তাঁত শিল্পীরা।

সফল উদ্যোক্তা ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে ব্যবসার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তিনিসহ সকল ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তা সরকারি অনুদান বা প্রণোদনা জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান।

উদ্যোক্তা নাজমুন নাহার বেগম জানান, তার কারখানায় ৬টি তাঁত মেশিনে আটজন কারিগর কাজ করতেন। এখান থেকে প্রতি সপ্তাহে ১২ থেকে ১৫ পিস শাড়ি ঢাকার মিরপুরসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতেন তিনি। নাজমুন নাহার বলেন, আমার এই ছোট্ট কারখানা থেকে মাসে প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার শাড়ি বিক্রি করি কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমনের প্রভাবে লকডাউনে এবার চরম আর্থিক সংকটে পড়েছি। তাই বাধ্য হয়ে কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে। ফরিদা ইয়াসমিন, আব্দুল কুদ্দুস, আফজালসহ বাকি উদ্যোক্তাদেরও একই অবস্থা। গ্রামজুড়ে দেড় শতাধিক হস্তচালিত তাঁত মেশিন এখন বন্ধ। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় ছন্দে ফিরবে বেনারসি পল্লীর তাঁত শিল্প এমনটাই আশা করছেন উদ্যোক্তা ও কারিগররা।

এ ব্যাপারে গজঘণ্টা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম বলেন, মানসম্মত বস্ত্র তৈরি করায় দেশে-বিদেশে গজঘণ্টা বেনারসি পল্লীর সুনাম রয়েছে। কিছুদিন আগে জাতীয় সংসদের স্পিকার মহোদয় এখান থেকে শাড়ি ক্রয় করেছেন। তাছাড়া এ বেনারসি পল্লীতে প্রায় তিন শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখানেই কাজ করে তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের ফলে কারখানা বন্ধ থাকায় মালিকদের সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকরাও মানবেতর জীবন যাপন করছে। দ্রুতই যাতে কারখানাগুলো সচল করা যায় সেজন্য কারখানা মালিকদের সরকারিভাবে প্রণোদনা দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

 
Electronic Paper