উৎসব চত্বরে শিল্পীদের মিলন মেলা
নীলফামারীতে আজ উদ্বোধ হচ্ছে ৪ দিনের আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসব
নীলফামারী প্রতিনিধি
🕐 ৭:১২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২০
চার দিনের আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসব শুরু হয়েছে নীলফামারীর বিন্না দিঘিতে (নীলসাগর)। বুধবার থেকে শুরু হওয়া ওই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩টায়।
শিল্পকলা চর্চার মাধ্যমে মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন ভবিষ্যৎ প্রজম্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে শুরু হওয়া চার দিনের এই উৎসব পরিণত হয়েছে ক্ষুদে, তরুণ আর গুণি শিল্পীর মিলন মেলায়। সমাপ্ত হবে ২৯ ফেব্রুয়ারী।
বুধবার সকাল ১০টা থেকে উৎসব স্থল নীলসাগরে জমায়েত হতে থাকেন স্থানীয় ক্ষুদে ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা চারুকলার তরুন শিল্পীরা। এরপর বেলা ১১টায় দিকে গোটা এলাকা পরিণত হয় শিল্পীর মিলন মেলায়। উৎসব সফল করতে বিভিন্ন শিল্পককর্ম দিয়ে তারা সাজাতে শুরু করেন নীলসাগর চত্ত্বর। উৎসবের প্রস্তুতিতে ক্ষুদে শিল্পীরা দলে দলে ভাগ হয়ে বড়দের সান্নিধ্যে দিনভর আঁকলেন বিভিন্ন ছবি।
বিকালে শিশুরা খেলে গ্রামীণ এতিহ্যের বিভিন্ন খেলা। দিন শেষে মিলিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। সেখানে প্রজ্জলিত অগ্নি চুল্লিতে পোক্ত করা হয় কাঁচা মাটি দিয়ে শিশুদের তৈরী পুতুলসহ পশু-পাখির প্রতিকৃতি।
উৎসবে অংশ নিতে পেরে উৎফুল্ল ক্ষুদে শিল্পীরা। তাদের মধ্যে আষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তমালিকা রায় নিপা ও অদিতি রায় উর্মি বলেন, এমন একটি বড় আয়োজনে অংশ গ্রহন করতে পেরে খুশি আমি। আমার জীবনে এটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে। জীবনে আর এমন সুযোগ পাবো কিনা ভাবতে পারছি না।
বৃহস্পতিবার বিকাল তিনটার দিকে চার দিনের এই আন্তর্জাতিক উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বরেণ্য শিল্পী অধ্যাপক রফিকুন নবী এবং বেঙ্গল ফাউণ্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু।
উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে.এম খালিদ। বিশেষ অতিথি থাকবেন জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান, নীলফামারী পৌরসভার মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক মমতাজুল হক।
চারুকলা উৎসব ২০২০ নীলফামারী আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস জানান, গুণি শিল্পী এবং সাংস্কৃতিমনা কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে উৎসবটি। সেটি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে স্থানীয় সংগঠন ভীষণ-২০২১ এবং ঢাকার আর্ট বাংলা।
আয়োজক কমিটির কিউরেটর হারুন অর রশিদ টুটুল জানান, শিল্পকলা চর্চার মাধ্যমে রুচিশীল ও সংস্কৃতিমনস্ক প্রজম্ম গড়ে তোলা এবং কয়েক প্রজম্মের শিল্পীদের মধ্যে পারস্পরিক মেলবন্ধন সৃষ্টির উদ্দেশ্য উৎসবের আয়োজন। বাংলাদেশের বরেণ্য ও তরুণ শিল্পীবৃন্দ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন, রুমানিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, জার্মানী ও ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ১২ জন স্বনামধন্য শিল্পী অংশগ্রহন রয়েছে।
তাদের সান্নিধ্যে নীলফামারী জেলা ২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২০০ শিক্ষার্থী টানা চার দিন শিল্পকর্ম নির্মানের সুযোগ পাবে। ওই উৎসবে থাকবে আন্তর্জাতিক আর্টক্যাম্প, কনটেম্পেররি আর্ট প্রজেক্ট, শিল্পকর্ম প্রদর্শনী, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কারুশিল্প মেলা ও লোক সংস্কৃতির বৈচিত্রময় উপস্থাপন।
হারুন অর রশিদ জানান, কারুশিল্প প্রদর্শিত হবে ২০ স্টলে। উৎসবে অংশগ্রহনকারী ১২০ জন শিল্পীর মধ্যে রয়েছেন ৮০ জন তরুণ এবং ২০ জন আধুনিক কনটেম্পোরারি শিল্পী। উৎসবে আঁকা চিত্রকর্মগুলো নিয়ে নীলসাগরে প্রদর্শণী অনুষ্ঠি হবে ২৯ ফেব্রুয়ারী। এরপর ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় প্রদর্শণী অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে।
উৎসব আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব ওয়াদুদ রহমান জানান, শিল্পচর্চার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম ইতিবাচক কাজের দিকে ধাবিত হবে এটিই আমাদের উদ্দেশ্য। এ উৎসবের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের শিল্পী বানানো নয়, বরং পরবর্তী প্রজন্ম যেন শিল্পমনার মাধ্যমে মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন হয়।
উৎসব বাস্তবায়নে ১৫০ সেচ্ছাসেবী কাজ করছে তার সংগঠনের। ক্ষুদে, তরুণ এবং গুণী শিল্পীসহ অংশগ্রহন করেছেন ৩৫০ জন শিল্পী।