ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কুকুর আতঙ্কে নগরবাসী

রংপুরে ১৮ দিনে ভ্যাকসিন নিয়েছেন ২৪০ জন

সুশান্ত ভৌমিক, রংপুর
🕐 ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০

চঞ্চল স্বভাবের দেড় বছরের ছেলে আয়ানকে নিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা সবসময় চিন্তায় থাকেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে কুকুর আঁচড় দেওয়ায় এখন বাবা-মায়ের মধ্যে অস্থিরতার পাশাপাশি অজানা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ঘটনার পর পরই ভ্যাকসিন দেওয়া হলেও পরবর্তী তারিখ মিস করেন তারা। ভ্যাকসিনেরর নির্দিষ্ট ডোজ পূর্ণ না হওয়ায় পুনরায় জলাতঙ্ক প্রতিরোধ ভ্যাকসিন দিতে এসেছেন রংপুর সিটি করপোরেশনের আয়ানের বাবা লুৎফর রহমান।

গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দা আলাল হোসেনের স্ত্রী আছিয়া বেগম (৫০) এমনিতে বিভিন্ন রোগব্যাধিতে অনেকটা অচল। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বাড়ির পাশের রাস্তার দিয়ে যাওয়ার সময় একদল কুকুরের হামলার শিকার হন। কিছু বুঝে উঠার আগে একটি কুকুর পায়ে কামড় বসিয়ে দেয়।

শুধু শিশু আয়ান এবং বৃদ্ধা আছিয়া নন গত শনিবার রংপুর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য শাখায় দেখা গেছে অনেকেই এসেছেন জলাতঙ্ক প্রতিরোধ ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য।

রংপুর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য শাখা সূত্রে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত ২৪০ জন বিভিন্ন বয়সের মানুষ র‌্যাবিক্স ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। প্রতিদিনই ১৩ জনেরও বেশি মানুষ কুকুরের হামলার শিকার হচ্ছেন। এছাড়া গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ মাসে ৮০০ মানুষ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। নিজস্ব উদ্যোগে আরও অনেকে প্রতিদিন ভ্যাকসিন নিচ্ছেন।

রংপুর সিটি করপোরেশনের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো. আব্দুল কাইয়ূম বলেন, হাইকোর্টের নিষেধ থাকায় প্রায় পাঁচ বছর ধরে সিটি করপোরেশন থেকে কুকুর নিধন বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে কুকুরের রেবিক্স জীবাণু ধ্বংসের জন্য ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ম্যাক্স ডগ ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচির অধীনে কুকুরকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। কুকুরের দেহে এটি কার্যকর থাকে এক বছর। তবে কার্যক্রমটি মাত্র ১৫ দিন স্থায়ী হয়।

বর্তমানে কর্মসূচিটি চলমান নেই কেন জানতে চাইলে তিনি জানান, ভ্যাকসিনেশন করা কুকুরগুলোকে অন্য কুকুর থেকে আলাদা করাটা সম্ভব হয়নি। কারণ রঙ দিয়ে মাথায় চিহ্নিত করা হলেও তা অল্প দিনেই মুছে যায়।

পরিবেশ ও মানবাধিকার সংগঠন মাপা বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী মুনীর চৌধুরী বলেন, জনস্বাস্থ্য ও জননিরাপত্তা যদি হুমকির মুখোমুখি হয় তাহলে কুকুরকে চিহ্নিত করে মেরে ফেলার মতো সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। তবে এমনিতে এ প্রজাতিটিকে ধ্বংসের জন্য হত্যা করাকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। নিষ্ঠুরতা এবং ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে উচ্চতর আদালত কুকুর নিধন বন্ধের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য এ প্রজাতি ধ্বংস হতে দেওয়া যাবে না।

রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, হাইকোর্টের নিষেধ থাকায় কুকুর নিধন কার্যক্রম পরিচালিত করতে পারছি না। প্রায় দিনেই কুকুর দ্বারা ভোগান্তির শিকার অনেকেই আমার কাছে আসেন কিন্তু আদালতের আদেশ থাকায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কুকুরকে ভ্যাকসিন দেওয়ার শুরু হলেও তা বর্তমানে কার্যকর নেই। কারণ কুকুরকে দীর্ঘ সময় চিহ্নিত করে রাখা খুবই কঠিন কাজ।

 
Electronic Paper