রংপুরে শুঁটকি ব্যবসায় ভাটা
সুশান্ত ভৌমিক, রংপুর
🕐 ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২০
দিন ভালো যাচ্ছে না রংপুরের শুঁটকি ব্যবসায়ীদের। লোকসানের বোঝা ভারী হওয়ায় কমে এসেছে এর সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীর সংখ্যাও। ব্যবসায় ভাটা পড়ায় প্রতি বছরে এক থেকে দেড় কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। এমন পরিস্থিতিতে আগামী মৌসুমেও লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন এখানকার ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা। ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের আর কে রোড ঘাঘটপাড়া শুঁটকি আড়তে কয়েকজন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হলে তারা এমন আশঙ্কার কথা জানান।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অগ্রহায়ণ থেকে আশি^ন-কার্তিক মাস পর্যন্ত শুঁটকির মৌসুম। এ সময়ে প্রতি বছর এখানকার চার আড়তদার অন্তত তিন থেকে পাঁচ কোটি টাকার শুঁটকি কেনাবেচা করেন। কিন্তু এবার আড়াই কোটিও পার হয়নি। এ লোকসানকে তারা বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে দেখছেন। ঘাঘটপাড়ায় এখন আগের মতো শুঁটকির ঘ্রাণও তেমন আসে না। খুব বেশি দোকান চোখে পড়ে না। কারণ গত কয়েক বছরে লোকসান সামাল দিতে না পেরে এখানকার ৪২টি দোকান থেকে কমতে কমতে এখন সংখ্যা ১৮-তে এসে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, বস্তায় বস্তায় সাজানো চ্যালা, লইট্যা, ফ্যাসা, কাচকি, ভেটকিসহ নানা জাতের সামুদ্রিক ও দেশি মাছের শুঁটকি। পরিচর্যায় ব্যস্ত অনেক ব্যবসায়ী। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আমদানি করা অন্তত ৪০ ধরনের শুঁটকি এখানে রয়েছে। রংপুর জেলাসহ লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসব আড়ত থেকে শুঁটকি কিনেন। ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বস্তায় রাখা বেশকিছু নষ্ট শুঁটকি বাছাই করছিলেন। বস্তার তলানিতে কিছু শুঁটকি গুঁড়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তার লোকসানের অংকটা বেড়ে যাবে বলে জানান।
তিনি বলেন, বেচা-বিক্রি একেবারে কম। দোকানে রাখতে রাখতে শুঁটকির ওজনও কমে আবার নষ্টও হয়। এতে তো শুধু লোকসান হচ্ছে।
আড়তদার লুৎফর রহমান বলেন, শুঁটকির মৌসুমে প্রতিদিন অন্তত পঞ্চাশ থেকে সত্তর হাজার টাকা করে বিক্রি হতো। এখন সেখানে ১০ হাজার টাকার উপরে বেচাকেনা নেই। দিন দিন পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। এজন্য পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বিরূপ আবহাওয়াও কিছুটা দায়ী বলে জানান তিনি। এ ব্যবসায়ীর মতে, এখানকার চারজন আড়তদার প্রতি বছর চার কোটির ঊর্ধ্বে শুঁটকি বেচাকেনা করতেন। কিন্তু এখন শুঁটকির মৌসুমেও বেচাকেনা হয় না। এখন বছরে এক থেকে দেড় কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। খুচরা-পাইকারি মিলে দিনে যেখানে এক থেকে দেড় লাখ টাকা বিক্রি হতো, সেখানে ১৫ হাজারও হয় না।
এ ব্যাপারে শুঁটকি ব্যবসায়ী সমিতির হাজী আজগর আলী বলেন, ব্যবসার পরিস্থিতি এত খারাপ হবে আগে ভাবতে পারিনি। দিন দিন বাকি বিক্রির পাল্লা ভারী হচ্ছে। সঙ্গে লোকসানও লেগেই আছে। এ কারণে অনেকেই ব্যবসা বদল করেছে। বছরের বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত একটু বেচাকেনা ভালো হয়। বাকি সময়টা কোনোরকমে চলে।
এদিকে সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিজ শেখ বলেন, ঘাঘটপাড়ায় ১৪টি শুঁটকির পাইকারি দোকান আর চারটি আড়ত রয়েছে। সবার ব্যবসার একই অবস্থা। দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রভাব শুঁটকিতে পড়েছে। এমন থাকলে আগামী মৌসুমেও শুঁটকির ব্যবসায় লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে।