সাঘাটার ঝাড়াবর্ষায় মৃৎশিল্পীদের স্বপ্ন
নুর হোসেন রেইন, সাঘাটা, গাইবান্ধা
🕐 ১০:০৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২০
কালের আবর্তে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে সাঘাটা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ সংকটের মুখে এই মৃৎশিল্প। গাইবান্ধা জেলার যমুনা নদীর তীরবর্তী সাঘাটা উপজেলা সদরের ঝাড়াবর্ষা গ্রাম যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা একটি স্বর্ণালী ছবি। ঝাড়াবর্ষা ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মৃৎশিল্পীদের বাসস্থান। যা সহজেই যে কারও মনকে পুলকিত করে। এক সময় এ গ্রামগুলো মৃৎ শিল্পের জন্য খুবই বিখ্যাত ছিল। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা, প্রযুক্তির উন্নয়ন ও নতুন নতুন শিল্প সামগ্রীর প্রসারের কারণে এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও অনুক‚ল বাজারের অভাবে এ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, সাঘাটার বিভিন্ন গ্রামে মৃৎ শিল্পীদের অধিকাংশই পাল সম্প্রদায়ের। বর্তমান বাজারে আগের মতো মাটির জিনিসের চাহিদা না থাকায় এর স্থান দখল করে নিয়েছে দস্তা অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজষপত্র। ফলে বিক্রেতারা মাটির জিনিসপত্র আগের মতো আগ্রহের সঙ্গে নিচ্ছে না। তাদের চাহিদা নির্ভর করে ক্রেতাদের ওপর। কিন্তু উপজেলার অজোপাড়াগাঁ পর্যন্ত এখন আর মাটির হাঁড়ি পাতিল তেমনটা চোখে পড়ে না। সে কারণে অনেক পুরনো শিল্পীরাও পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছে।
ঝাড়াবর্ষায় যেখানে এক সময় শতাধিক পরিবার ছিল, বর্তমানে ১২ পরিবার এ ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। প্রতিজনের প্রতিদিনের আয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মাটির জিনিসপত্র তার পুরনো ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। ফলে এ পেশায় যারা জড়িত এবং যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন মৃৎশিল্প তাদের জীবনযাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। দুঃখ-কষ্টের মাঝে দিন কাটলেও সাঘাটার মৃৎশিল্পীরা এখনো স্বপ্ন দেখেন। কোনো একদিন আবারও কদর বাড়বে মাটির পণ্যের। সেদিন হয়তো আবারও তাদের পরিবারে ফিরে আসবে সুখ-শান্তি। আর সেই সুদিনের অপেক্ষায় আজো দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা। উপজেলার ঝাড়াবর্ষা পালপাড়া গ্রামের পবিত্র পাল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন মাটি সংগ্রহে অনেক খরচ করতে হয় তাদের।
এ ছাড়াও জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে মিল না থাকায় প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হচ্ছে। সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারতাম।