দিনাজপুরে যৌতুকের বলি গৃহবধূ ছন্দা
দিনাজপুর প্রতিনিধি
🕐 ১০:১৬ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২০
স্বামীর অমানবিক শারীরিক নির্যাতন আর যৌতুকের বলি হলেন এক সন্তানের জননী সাবিনা ইয়াসমিন ছন্দা (২২)। বিয়ের পর থেকেই স্বামীর অবহেলা আর যৌতুকের চাপে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হলো তাকে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা নূর ছালাম বাদী হয়ে জামাতা ওমর ফারুককে (২৮) প্রধান আসামি করে মামলা করেন। গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ছন্দার ময়নাতদন্তের পর বাবার বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের পূর্ব শুখানপুখুরী ইউনিয়নের ভূঁইয়া পাড়ার পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়।
পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে দেখা গেছে, ওই গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার পর বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে মুখে ও গায়ে বিষ ছিটিয়ে দেয় ফারুক।
জানা যায়, একাধিক মেয়ের সঙ্গে স্বামীর পরকীয়া ছিল। এতে বাধা দেন ছন্দা। ফলে স্বামীর অমানবিক নির্যাতন নেমে আসে ছন্দার ওপর। পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নে সরকার পাড়া গ্রামের ওমর ফারুকের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত ফারুক পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের সরকারপাড়া গ্রামের আলতাফুর রহমানের ছেলে। ফারুক পুলিশের আর্মস ব্যাটালিয়নের একজন সদস্য। বিয়ের তিন বছর পর তাদের সংসারে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।
নিহত ছন্দার বাবা নুর ছালাম বলেন, জামাতা ওমর ফারুক একাধিক মেয়ের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের কারণে ছন্দার সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া লেগেই থাকত। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার বৈঠক হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
জানা যায়, তিন বছর আগে পারিবারিকভাবে পাঁচ লাখ টাকা আসবাবপত্র ও তিন ভরি স্বর্ণের গহনা প্রদান করে ফারুকের সঙ্গে বিয়ে হয় ছন্দার। কয়েকদিন ধরে স্ত্রী ছন্দার কাছে আরও ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে আসছিল স্বামী ওমর ফারুক। ছন্দা যৌতুকের টাকা আনতে অপারগতা প্রকাশ করলেই তার ওপর নেমে আসত অমানুষিক নির্যাতন। এরই ধারাবাহিতায় গত শুক্রবার দিবাগত রাতে শারীরিক নির্যাতনের পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলে স্ত্রী ছন্দা। অবস্থা বেগতিক দেখে ছন্দার মুখে ফারুক ও তার মা-বাবা মিলে বিষ ঢেলে দেয়। বিষ দেওয়ার পর হাসপাতালে না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করে, অবস্থা খারাপ খুব খারাপ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে ছন্দার মৃত্যু হয়।
বোদা থানার ওসি (তদন্ত) আবু সায়েম মিয়া জানান, নিহতের বাবা বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি হত্যা মামলা করেন। পরে ওমর ফারুকের বাবা আলতাবুর রহমানকে আটক করা হয়। অন্য আসামিরা পলাতক। প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্টে নিহতের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে জানা যাবে।