ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

গ্রিন ক্লিন হসপিটাল

মোহাম্মাদ মানিক হোসেন, চিরিরবন্দর
🕐 ১০:২০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ০৮, ২০২০

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এই সরকারি হাসপাতাল দেশের অন্যান্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কিছুটা আলাদা। চিরিরবন্দর হাসপাতালটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ঝকঝকে-তকতকে। চিকিৎসা সেবা নিয়ে এলাকার মানুষ সন্তুষ্ট। চেষ্টা থাকলে পারা যায়-এমন মতাদর্শের ওপর পরিকল্পনা নিয়ে গত ছয়-সাত মাসে এই সরকারি হাসপাতালে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।

সদ্য যোগদানকারী ১১ জন চিকিৎসক সেবার মনোভাব নিয়ে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। হাসপাতালে আসা হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসা সেবা পেয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরছেন। প্রতিদিন হাসপাতালের ইনডোরে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী।

মায়েদের স্বাভাবিক উপায়ে শিশু জন্মদানে (নরমাল ডেলিভারি) দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই হাসপাতাল। চিকিৎসকরা বদলে দিয়েছেন উপজেলার চিকিৎসা সেবার চিত্র। যত দিন যাচ্ছে তত বৃদ্ধি পাচ্ছে নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা। বর্তমানে এই হাসপাতালে প্রতি মাসে ৬০ থেকে ৭০ জন নারী স্বাভাবিক উপায়ে সন্তান জন্ম দিচ্ছেন।

এখানে নবজাতকের মাকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয় এবং নবজাতকের জন্য মশারি ও সাধ্য অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জিনিস উপহার দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত কয়েকজন চিকিৎসক মিলে টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় উন্নত চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। চিকিৎসকদের এই মহতী উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়ে ও তাদের সফলতা কামনা করে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই বার্তা পাঠানো হয়েছে।

এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা মোছা. আরজিনা খাতুন তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, দেরি করে সন্তান নেওয়ায় ও এলাকার কিছু লোকের কথায় ভয় পেয়েছিলাম। অনেকে বেসরকারি ক্লিনিকে অস্ত্রোপচার করে সন্তান জন্মদানের পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাঠকর্মী এবং চিকিৎসকরা অভয় দিয়ে দায়িত্ব নিলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে ভর্তি হই। এখানে নরমাল ডেলিভারিতে আমার সন্তান জন্মলাভ করেছে। আমি ও আমার ছেলে এখন সুস্থ আছি।

এদিকে ৫০ শয্যার এই হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ঢুকলেই চোখে পড়বে চমৎকার ফুলের বাগান, সবজি বাগান। হাসপাতাল ভবনের ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যাবে সুন্দর যত্ন করে টবে রাখা গাছ। ভবনের তৃতীয় তলা পর্যন্ত সব জায়গায় বসানো হয়েছে গাছসহ টব। বিভিন্ন প্রজাতির গাছসহ এক হাজারেরও বেশি টব বসানো হয়েছে হাসপাতাল ভবনে।

ইতিমধ্যে এই হাসপাতালটিকে বলা হচ্ছে গ্রিন ক্লিন হসপিটাল। মূল ভবনে ঢুকলেই মনে হবে এ এক নতুন জগৎ। সব কক্ষ, বারান্দা, ওয়ার্ড ও টয়লেট পরিষ্কার, পুরো হাসপাতাল ঝকঝকে-তকতকে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার তারা হাসপাতালে ঝাড়ু দেন, মোছেন ও টয়লেট পরিষ্কার করেন।

একটি বেসরকারি সংস্থার মাঠকর্মী পারভীন আক্তার পেটে ব্যথা নিয়ে গত ৩০ ডিসেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হন। মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসকের উপস্থিতিতে কথা হয় তার সঙ্গে। পারভীন আক্তার বলেন, বছরখানেক আগে ডায়রিয়ার কারণে ভর্তি হয়েছিলাম। এবার অসুস্থ হওয়ার পর এসে দেখি হাসপাতাল পাল্টে গেছে। নিয়ম করে ঝাড়ু দেওয়া হচ্ছে। বাথরুম পরিষ্কার। অনেক স্বস্তিতে আছি।

চিরিরবন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, এই হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আজমল হকের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় ও সবার সহযোগিতায় এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর কাছে আস্থার জায়গায় পরিণত হয়েছে।

হাসপাতাল ভবনের নিচতলায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আজমল হকের কার্যালয়। দরজার ওপরে লেখা ‘আমি ও আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত’।

হাসপাতালের এই পরিবর্তন সম্পর্কে আজমল হক বলেন, এখানে কিছু সংস্কার করা হয়েছে ও কিছু অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। একসময় এ হাসপাতালে ডাক্তারের চরম সংকট ছিল। মাত্র তিন জন চিকিৎসক দিয়ে স্বাস্থ্যসবার মান বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

বর্তমানে হাসপাতাল পরিষ্কার রাখা ও সদ্য যোগদানকারী চিকিৎসকদের সহায়তা করার জন্য জনবল দেওয়া হয়েছে। তাদের এই সহায়তায় পাল্টে গেছে হাসপাতালের বাহ্যিক চেহারা ও সেবার মান।

 
Electronic Paper