ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আদিতমারীতে টিআর প্রকল্পে অনিয়ম

কাগজ-কলমে কাজ শেষ বাস্তবে শুরুই হয়নি

আদিতমারী (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
🕐 ৯:৪৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০১৮

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে দ্বিতীয় পর্যায়ে টিআর ৪৪টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ৪৪ লাখ, আর কাবিখা আটটি প্রকল্পের জন্য ৬৪ টন চাল বরাদ্দ ছিল।

অর্থবছর শেষ হওয়ার আগে কাগজ কলমে শতভাগ কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে বিল উত্তোলন করা হলেও বাস্তবে শুরুই হয়নি প্রকল্পের কাজ। সরকারি অর্থ বুঝে নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের কিসামত বড়াইবাড়ি বটতলা ব্রাহ্মআশ্রম সংস্কারের জন্য গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় টিআর প্রকল্পে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। আশ্রমটির সভাপতি রাম মোহন রায় প্রকল্প চেয়ারম্যান হিসেবে দুই কিস্তিতে টাকা উত্তোলন করেন। সরকারি অর্থ উত্তোলন করে নিজের কাছে রাখায় স্থানীয়রা দ্রুত কাজ শুরুর দাবি করেন। স্থানীয়দের চাপের মুখে তিন মাস আগে মাত্র এক হাজার ইট কিনে মন্দির মাঠে রাখেন প্রকল্প চেয়ারম্যান রাম মোহন। ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে হয়ে কাজের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে গত ৯ জুলাই ওই আশ্রমের ভক্ত ও এলাকাবাসী ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
তবে প্রকল্পের সভাপতি রাম মোহন রায় বলেন, ‘স্থানীয় এমপি ও প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকায় তিনি এ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন। ইট নেওয়া হয়েছে। বাকি কাজও করা হবে।’ একই অবস্থা উপজেলার প্রায় সব প্রকল্পের। উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের চণ্ডিমারী পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদ সংস্কারের নামে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও মসজিদে কোনো কাজই করা হয়নি। ওই এলাকার কুটিরপাড় মাদ্রাসা থেকে পশ্চিমে স্প্যার বাঁধ পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাটের জন্য কাবিটা প্রকল্পের দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকা বরাদ্দ হলেও মাত্র ৩৫ হাজার টাকায় ঘাস কেটে মাটি সমান করা হয়েছে। তবে এ প্রকল্প দুটির সভাপতি ওই ইউপি সদস্য আফসার আলী বলেন, ‘কাজ না করলে পিআইও বিল দিলেন কেন? তারা কাজ দেখে তো বিল দিয়েছেন।’
একইভাবে ঘাস কেটে মাটি সমান করে কাবিটার ৭৫ হাজার টাকার ভুয়া ভাওচার দেখানো হয় পলাশী ইউনিয়নের মদনপুরের জোবেদের বাড়ি থেকে বটতলা দিয়ে আশরাফের বাড়ির রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে। এছাড়া সারপুকুর রাম মন্দির রেললাইন থেকে নারায়ণের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারে ৬০ হাজার টাকা, দুর্গাপুর গোবদা ধরনীর থেকে গোবদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাটের জন্য ৬০ হাজার টাকা ও কমলাবাড়ির কালামের বাড়ি থেকে আফাজ ডাক্তারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পের ৫০ হাজার টাকা কাজ না করেই ভাগ করে নিয়েছেন কর্মকর্তা ও প্রকল্প সভাপতিরা। এসব প্রকল্পের সভাপতিরা প্রভাব খাটিয়ে কাজ না করেও বিল তুলে নিয়েছেন। কেউ আবার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
তবে উৎকোচের বিষয়টি অস্বীকার করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মফিজুল ইসলাম জানান, উপজেলার সব প্রকল্প একা দেখা সম্ভব নয়। তাই এমনটা হতেই পারে। তবে অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। কাজ না করে আত্মসাৎ করার কোনো সুযোগ নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান জানান, অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 
Electronic Paper