ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

অরক্ষিত সিংড়া ফরেস্ট দখলে কমছে আয়তন

ছাইফুল ইসলাম মাছুম, দিনাজপুর থেকে ফিরে
🕐 ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২১, ২০১৯

দিনাজপুর বীরগঞ্জের সিংড়া জাতীয় উদ্যান (সিংড়া ফরেস্ট) অরক্ষিত হওয়ায় উজাড় হয়ে যাচ্ছে বনাঞ্চল। আর স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে দিন দিন কমছে সংরক্ষিত বনটির আয়তন। এতে বনের জীববৈচিত্র্য চরম হুমকির মুখে পড়ছে, বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বনের অনেক বিরল প্রাণী ও বৃক্ষরাজি। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই জরুরি পদক্ষেপ না নিলে, অচিরেই হারিয়ে যাবে সিংড়া ফরেস্ট।

বনাঞ্চলটি এক সময় রকমারি প্রজাতির পাখি আর বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য থাকলেও, এখনকার চিত্র বেশ করুণ। সরজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশপাশের গ্রামের মানুষের অবাধ বিচরণের কারণে হাতেগোনা কিছু বন্যপ্রাণী ছাড়া, বনের অধিকাংশ বন্যপ্রাণী হারিয়ে গেছে কিংবা হত্যার শিকার হয়েছে। তবে বন কর্মকর্তা দাবি করেছেন, খাদ্য সংকটের কারণে বন্যপ্রাণীরা অন্যত্র চলে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, বন বিভাগের চোখের সামনে বনাঞ্চলটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছলেও, বন কর্মকর্তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। বরং বনাঞ্চল উজাড় ও দখলে বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশের তথ্য রয়েছে।

বীরগঞ্জ উপজেলার স্থানীয় উন্নয়নকর্মী কামরুজ্জামান বাবু খোলা কাগজকে বলেন, সিংড়া শালবনটি অরক্ষিত হওয়ায়, বনের আয়তন দিন দিন সংকোচিত হয়ে আসছে। কতটুকু এলাকাজুড়ে এই বনাঞ্চল সেই সীমানা নির্ধারিত নেই। তিনি বলেন, কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায়, স্থানীয় চোরাকারবারিরা সহজে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তবে বন বিভাগের কথিত টেন্ডার বন উজাড়ের হার কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। দেখা যায় ১০০ গাছ টেন্ডারের কথা বলে ৩০০ গাছ কেটে ফেলছে। যে হারে বন উজাড় হচ্ছে, সে হারে নতুন বনায়ন হচ্ছে না।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন বলেন, সারা দেশের শালবনগুলোর চিত্র একই। বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, বন বিভাগ দেখেও না দেখার ভান করে। কিছু বললে তারা বলে আমাদের লোকবল নেই। কিন্তু আমাদের কাছে তথ্য আছে, বন উজাড়ের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে বনকর্তারা দায়ী। তিনি বলেন, বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় বেশি দরকার মানুষকে সংযত করা। আর বনের সুরক্ষার জন্য সীমানা প্রাচীর তৈরি করে, বনকে বন্যপ্রাণীবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে।

সিংড়া ফরেস্টের দায়িত্বে থাকা বন কর্মকর্তা হরিপদ দেবনাথ খোলা কাগজকে বলেন, যেখানে আটজন স্টাফ থাকার কথা, সেখানে মাত্র তিনজন স্টাফ রয়েছে। এছাড়া বনের চারপাশে কোনো সীমানা প্রাচীর নেই। এসব কারণে সিংড়া ফরেস্ট কিছুটা অরক্ষিত। সীমানা প্রাচীর দিতে পারলে, বনের আয়তন যতটুকু আছে, ততটুকু থাকবে, আয়তন কমবে না।

তিনি বলেন, আগে শাল গাছ চুরির প্রবণতা থাকলেও, এখন নেই। বন্যপ্রাণীর বিষয়ে হরিপদ দেবনাথ বলেন, খাদ্য সংকটের কারণে বন্যপ্রাণী অন্যত্র চলে যাচ্ছে। তবে খাদ্য সংকট নিরসনে ৩৭ প্রজাতির বনজ ও ফলজ গাছ লাগানোর উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী টেলিফোনে খোলা কাগজকে বলেন, আমরা সিংড়া ফরেস্ট সম্পর্কে খোঁজ নিব। বনটির সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করব।

প্রসঙ্গত, সিংড়া ফরেস্ট স্থানীয়ভাবে সিংড়া শালবন নামে পরিচিত। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ৮৫৯ দশমিক ৯৩ একর জায়গাজুড়ে এই সিংড়া শালবন। ১৮৮৫ সালে এই বনকে অধিভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে বন বিভাগের অধীনে নিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়। পরে ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে বন বিভাগ এটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে।

 
Electronic Paper