ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

গাইবান্ধায় আরও ৪০ গ্রাম প্লাবিত

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
🕐 ৫:৫২ অপরাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০১৯

করতোয়া ও বাঙালি নদীর পানি বেড়ে প্রবল চাপে গাইবান্ধায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের তিনটি পয়েন্ট ধসে গেছে। এতে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে গোবিন্দগঞ্জ পৌর এলাকাসহ অন্তত ৪০ গ্রাম। দুর্ভোগে পড়েছে সাড়ে পাঁচ লাখ বানভাসি মানুষ। এদিকে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ঘাঘট নদীর পানি ধীরগতিতে কমতে থাকলেও গাইবান্ধায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির তেমন কোনও উন্নতি হয়নি।

জানা গেছে, গত দুইদিন (শুক্রবার ও শনিবার) বিকাল পর্যন্ত গোবিন্দগঞ্জের চরবালুয়া, পশ্চিম কাজিপাড়াসহ তিনটি পয়েন্টে বাঁধের কিছু অংশ ধসে যায়। এর ফলে পানি ঢুকে প্লাবিত হয় মহিমাগঞ্জ, কোচাশহর, শালমারা, তালুককানুপুর, নাকাইহাট, রাখালবুরুজ ও ফুলবাড়িসহ ৯টি ইউনিয়নে বিস্তীর্ণ জনপদ। ঘরবাড়ি তলিয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।

এছাড়া পৌর এলাকার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের বাসাবাড়ি, অলিতেগলিতে এখন হাঁটু পানি। তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার আখসহ বিভিন্ন ফসলের জমি। ভেসে গেছে প্রায় শতাধিক পুকুর ও খামারের মাছ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কয়েকটি সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থাও।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ প্রধান জানান, বাঁধ ধসে উপজেলার ৮-৯টি ইউনিয়নের অন্তত ৪০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ পর্যন্ত সরকারিভাবে ৩৫ মে. টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বরাদ্দের চাল বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এনডিসি) সাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা, সাদুল্যাপুর, পলাশবাড়ীর আংশিক ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার অর্ধশতাধিক ইউনিয়নসহ দুই পৌর এলাকায় পানিবন্দি হয়েছেন সাড়ে চার লাখ মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার বাড়িঘর। ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে কাঁচা-পাকা রাস্তা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঁধ।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিস্তীর্ণ এলাকার বিভিন্ন ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৯ হাজার ৮২১ হেক্টর। এছাড়া ২ হাজার ৯৪১ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। পানি ওঠায় ও ধসে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে পড়েছে জেলা ও উপজেলাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা। এছাড়া পানির প্রবল চাপে রেললাইনের স্লিপার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বন্ধ রয়েছে ট্রেন যোগাযোগ।’

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন বলেন, ‘দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য প্রতিদিন ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে এক হাজার মেট্রিক টন চাল, নগদ সাড়ে ১০ লাখ টাকা ও পাঁচ হাজার কার্টন শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। তবে লোকবল ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে দুর্গম চরাঞ্চলসহ দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ১৬৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে আশ্রয় নিয়েছে ৭১ হাজার ২৪ জন। অধিকাংশ কেন্দ্রেই পৌঁছানো হয়েছে চাল ও শুকনো খাবারের প্যাকেট। দুর্গত মানুষের জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় ৭৫টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।’

অপরদিকে, গত পাঁচ দিনে বন্যার পানিতে ডুবে ও সাপের কামড়ে মারা গেছে তিন শিশুসহ পাঁচজন। পাঠদানসহ সার্বিক কার্যাক্রম বন্ধ রয়েছে প্রায় চার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

রোববার (২১ জুলাই) সকালে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘সকাল ৮টা পর্যন্ত ফুলছড়ির তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ১১ সে.মি কমে বিপদসীমার ১৩২ সে.মি, ঘাঘট নদীর পানি ১৩ সে.মি কমে শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৪ সে. মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া করতোয়া ও বাঙালি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে করতোয়া নদীর পানি বিপদসীমার ৭ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি কমে বিপদসীমার ৫০ সে. মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর দুইদিন পরেই সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নেমে আসবে।’

 
Electronic Paper