গা ঢাকা দিয়েছেন সেই ওসি মোয়াজ্জেম
রংপুর অফিস
🕐 ১:২৬ অপরাহ্ণ, মে ২৮, ২০১৯
যৌন হয়রানির প্রতিবাদের কারণে গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে দেয়া ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির (১৮) ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে আলোচনায় আসা ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন গা ঢাকা দিয়েছেন।
সোমবার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর খোঁজ নিতে গেলে কেউই বলতে পারেননি ওসি মোয়াজ্জেম এখন কোথায়। এদিকে দুদিন আগেও তাকে রংপুরে দেখা গিয়েছিল বলে একটি সূত্র জানালেও এখন কোথায় আছেন সে বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।
এর আগে গত ১০ এপ্রিল সোনাগাজী থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে। এরপর গত ৮ মে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার পর রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হলে গত সপ্তাহে তিনি রংপুর রেঞ্জ অফিসে যোগ দেন।
রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি অফিসের স্টাফ অফিসার সহকারী পুলিশ সুপার শরিফুল ইসলাম জানান, সংযুক্তির আদেশ দেয়ার পর কয়েকদিন আগে মোয়াজ্জেম হোসেন রংপুরে রেঞ্জে যোগদান করেছেন। ঢাকায় পুলিশ সদর দফতরে তলব করায় তিনি ঢাকায় গেছেন বলে শুনেছি। এখন কোথায় আছেন সেটা জানি না।
সোমবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে। এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।
গত ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে নুসরাত আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান। এ সময় মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান। সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। নুসরাত অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে বুধবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।
ওই ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি খতিয়ে দেখতে ১৩ এপ্রিল ডিআইজি এসএম রুহুল আমিনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি ২ মে প্রতিবেদন পুলিশ সদর দফতরে জমা দেয়। ফেনীর এসপি জাহাঙ্গীর আলম সরকার এবং সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন, এসআই ইকবাল ও এসআই ইউসুফের গাফিলতির কথা উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি।
রাফির পরিবার ও এলাকার সচেতন মহলের অভিযোগ, ওসির মদদে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা এলাকায় দাপট নিয়ে চলতেন। একাধিকবার অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে ছাত্রী নিপীড়নের গুরুতর অভিযোগ উঠলেও তার কোনো সুরাহা হয়নি। সাহস ও প্রতিবাদ নিয়ে রাফি রুখে দাঁড়ানোয় বেরিয়ে এসেছে সোনাগাজী ফাজিল মাদরাসা ঘিরে নানা অপকর্মের কাহিনী।