ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পাথর ক্রাসিং মেশিনের শব্দ ও ধুলায় জনদুর্ভোগ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
🕐 ৯:৪০ অপরাহ্ণ, মে ১৯, ২০১৮

বাংলাবান্ধা বিজিবি ক্যাম্প থেকে স্থলবন্দরের শূন্য রেখা পর্যন্ত সড়কের দুপাশে পাথর ক্রাসিং মেশিনের শব্দ ও ধূলায় রাস্তা পারাপারে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তেঁতুলিয়া-বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের সড়কের দুপাশে উন্মুক্তভাবে প্রায় শতাধিক পাথর ক্রাসিং মেশিন বসিয়ে লোড-আনলোড, নেটিং ও ক্রাসিং করে আসছে এলসি পাথর ব্যবসায়ীরা। তারা নিজস্ব চৌহদির বাইরে মহাসড়কের ওপরেই খোলামেলাভাবে পাথর ক্রাসিং ও লোড-আনলোড করায় পাথর ক্রাসিং মেশিনে ধূলাবালি ও প্রচণ্ড শব্দে বিজিবি ক্যাম্প থেকে ২ কিলোমিটার জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর যাতায়াতের একমাত্র সড়কটিতে দেশি-বিদেশি যাত্রীদের চরম  ভোগান্তিতে ফেলেছে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, প্রতিদিন এ বন্দর দিয়ে গড়ে দুইশ থেকে আড়াইশ জন যাত্রী পারাপার হন। কিন্তু জিরো পয়েন্ট থেকে বাংলাবান্ধা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পৌঁছাতে যাত্রীদের পাথর ক্রাসিংয়ের ধূলা-বালিতে নাজেহাল অবস্থায় পড়তে হয়। এ বিষয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে ব্যবসায়ীদের মহাসড়ক থেকে পাথর কোয়ারি সরিয়ে সুরক্ষিত স্থানে বসানোর আদেশ জারি করা হলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না
অপরদিকে, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে পাথর ক্রাসিং মেশিনে কয়েক হাজার শ্রমিক কোনো রকম স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়াই পাথর ক্রাসিং মেশিন, নেটিং ও ডেম্পিংয়ের কাজ করছেন। এভাবে ক্রাসিং মেশিনে পাথর সাইটে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জিনিসপত্র ব্যতীত কাজ করায় শ্রমিকরা নানা ধরনের অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে। তারা সুস্থতার জন্য স্থানীয় কেমিস্ট ও পল্লী চিকিৎসকের কাছে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক ব্যথানাশক ওষুধ কিনে খেয়ে সাময়িক সুস্থতা লাভ করে পুনরায় পাথর সাইটে কাজ করছে।
চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক এবং বাংলাবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদা মিলন জানান- গত মাসে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে এক আলোচনা সভায় পাথর ক্রাসিং জোন স্থাপন বা পাথর ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট বাউন্ডারি ওয়াল স্থাপন করা ও বিজিবি ক্যাম্প থেকে স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়কে ধূলাবালি প্রতিরোধে পানি সেচ এবং শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু নানা কারণে সেগুলো এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তবে সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. মো. রাজিউল হক রাজু জানান, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে পাথর লোড -আনলোড, ডেম্পিং ও নেটিং কাজের জড়িত শ্রমিকরা শরীরের ব্যথাসহ সর্দি-কাশি রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসে। এছাড়া হাত-পা ফুলা ও জখম নিয়ে প্রতিনিয়ত আসে। কিন্তু এদের শারীরিক সচেতনতা ও সুরক্ষার বিষয়টি এখনো অজানা।
চিকিৎসকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে যে সমস্ত পাথর শ্রমিক ক্রাসিং মেশিনে পাথর ভাঙ্গার যাবতীয় কাজ করেন তাদের শরীরে ক্রাসিং মেশিনের ক্ষুদ্র ডাষ্টের কনা শরীরে প্রবেশ করে। ফলে শ্রমিকরা সিলিকোসিস রোগসহ শোষণতন্ত্র ও ফুসফুস রোগে আক্রান্ত হয়ে পর্যায়ক্রমে প্রাণঘাতী অসুখে ভুগতে পারেন। এক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যক পাথর শ্রমিকের স্বাস্থ্য সচেতনতায় মাকস ব্যবহারসহ সিলিকোসিস প্রতিরোধের জন্য সরকারিভাবে জরিপ হওয়া অত্যন্ত আবশ্যক। নচেৎ এ অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক পাথর শ্রমিক সর্দি-কাশিসহ অদূর ভবিষ্যতে প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 
Electronic Paper