ঢাকা, শনিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মিনা বেগমের নামে ভিজিডি কার্ড, চাল তোলেন অন্য কেউ

এস এম আসাদুজ্জামান, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)
🕐 ২:৫৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩

মিনা বেগমের নামে ভিজিডি কার্ড, চাল তোলেন অন্য কেউ

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে দুস্থদের জন্য সহায়তা ভিজিডি কার্ডের তালিকায় নাম থাকলেও ৬ মাসের চাল অন্যজন তুলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

এদিকে ভুক্তভোগী নারী ২০২৩-২৪ ভিডব্লিউবি কর্মসুচির অর্থ বছরে ভিজিটির অনলাইনে নামের তালিকায় থাকার পরেও গত ৬ মাসের ১৮০ কেজি পুষ্টি চাল তুলতে না পাড়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবারটি। ওই নারীর বরাদ্দকৃত চাল অন্য ব্যক্তি কিভাবে তুলছেন বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদসহ উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে জানার পরেও সমাধান পায়নি মিনা বেগম। ভুক্তভোগী মিনা বেগমের বাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের সীমান্তঘেষা গজেরকুটি গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের দিনমজুর জফুর আলীর স্ত্রী।

মিনা বেগমের স্বামী দিনমজুর জফুর আলী জানান, সংসারে অভাব দেখা দেওয়ায় স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েও কোনোধরণের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাইনি। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সচিব শফিকুল ইসলামের মাধ্যমে আমার স্ত্রীর জন্য একটি ভিজিটি কার্ডের আবেদন করি। পরে সচিব শফিকুল ইসলাম আমার স্ত্রী মিনা বেগমের নামে একটি ভিজিটি কার্ডের ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু ভিজিটির প্রথম চাল বিতরণের দিন গেলে আমার স্ত্রীর নামে কোনো কার্ড হয়নি। পরে বিষয়টি সচিব শফিকুল ইসলামকে জানালে তিনি জানান, আমিতো এখন নেই। আমি বর্তমানে অবসরে আছি। তবে আপনার স্ত্রীর ভিজিটির কার্ড ১০০% হয়েছে। আপনি ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নেন। পরে আমি ইউনিয়ন পরিষদের খোঁজ নিতে গেলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জানান, আপনার স্ত্রীর নামে কোন ভিজিটি কার্ড হয়নি। শুনে মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেলো। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না বাহে!

জফুর আলী আরও জানান, আমার স্ত্রীর ভিজিটির কার্ড হয়নি বিষয়টি শুনে সংরক্ষিত মহিলা সদস্যের ছেলে মানিক মিয়া বাবু ১৫ টাকা চালের কেজির একটি রেশন কার্ড করে দেন। কিন্তু রেশন কার্ডের চাল তুলতে গিয়ে দেখি রেজিষ্টারে আমার কোনো নাম নেই। শুনে মনটা এতো খারাপ হলো সেটা ভাষায় বুঝাতে পারবো না বাহে! কেন রেশন কার্ডের নামটা নেই এ খবর জানার জন্য পরের দিন খাদ্য অধিদপ্তরে গেলে তারা জানান, আপনার স্ত্রীর নামে ভিজিটি কার্ড হয়েছে। তাই আপনার নামে আর রেশন কার্ড হবে না। আপনি উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসে যান। সঙ্গেসঙ্গে তিনি মহিলা বিষয়ক অফিসে গিয়ে দেখেন স্ত্রী মিনা বেগমের নামে ভিজিটি কার্ড সম্পূর্ণ হয়েছে। ০৯নং ওয়ার্ড। ভিজিটি কার্ডের ক্রমিক নং ৪৩। কিন্তু প্রশ্ন হলো কে খাচ্ছেন তার স্ত্রীর নামে বরাদ্দকৃত ভিজিটির পুষ্টি চাল।

জফুর আলী ও তার স্ত্রী মিনা বেগম ভিজিডি কার্ডের ৬ মাসের পুষ্টি চালসহ ভিজিডি কার্ডটি উদ্ধারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্ত ক্ষেপ কামনা করেন।

গজেরকুটি ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল আলিম বলেন, শুনেছি মিনা বেগমের ভিজিডি কার্ডের তালিকায় নামসহ ৪৩ নাম্বার সিরিয়াল আছে কিন্তু কেন তিনি ৬ মাস ধরে চাল তুলতে পারেনি, সেটা আমার জানা নাই। তবে সামনে চাল বিতরণের সময় ৪৩ নাম্বার সিরিয়ালটি আটক করলে এর সমাধান হবে বলে আশা করছি।

নাওডাঙ্গা ইউনিয়নে পরিষদের চেয়ারম্যান হাছেন আলীর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছাঃ সোহেলী আক্তার বলেন, দুস্থ ও অসহায় নারীদের খাদ্য নিরাপত্তা জন্য ২০২২-২৩ সালের ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৪ হাজার ৯০০টি পরিবারের মাঝে খাদ্যশস্য (পুষ্টি চাল) বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দুই বছরে প্রতি মাসে ৩০ কেজি পুষ্টি চাল পাবেন। তবে মিনা বেগমের বরাদ্দকৃত পুষ্টি চাল কে তুলছেন সামনের চাল বিতরণে জানা যাবে। সেই সাথে তদন্ত সাপেক্ষে মিনা বেগমের ৬ মাসের ১৮০ কেজি পুষ্টি চাল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এ কর্মকর্তা।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাব্বির আহমেদ জানান, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে মহিলা বিষয়ককে অবগত করে হচ্ছে। সেই সাথে দ্রুততম সময়ে ভিজিডির কার্ড উদ্ধারসহ ৬ মাসের চাল সুবিধাভোগীকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে এবং ভিজিডি কার্ডের অনিয়ম পাওয়া গেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 
Electronic Paper