ঢাকা, শনিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নদী ভাঙনে দিশেহারা তিস্তাপাড়ের মানুষ

আদিতমারী (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
🕐 ৫:২৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩০, ২০২৩

নদী ভাঙনে দিশেহারা তিস্তাপাড়ের মানুষ

পানি কমে যাওয়ায় তীব্র ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন চান তারা।

 

জানা গেছে, ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর নীলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ঐতিহাসিক এ তিস্তা নদী। যা লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রক্ষপুত্র নদের সঙ্গে মিশেছে। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার।

গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে উজানের প্রতিবেশী দেশ ভারত সরকার একতরফা তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করায় বর্ষা শেষেই বাংলাদেশ অংশে তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয়। বর্ষাকালে বন্যা আর নদী ভাঙগনের মুখে পড়ে তিস্তাপাড়ের মানুষ। ভাঙন ও প্রবল স্রোতে ভেসে যায় ফসলি জমি বসতভিটাসহ সকল স্থাপনা। দিশেহারা হয়ে পড়ে নদীপাড়ের মানুষ।

গত সপ্তাহের টানা দুই দিনের বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়ে নদীপাড়ের কয়েক হাজার পরিবার। পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে শত শত হেক্টর জমির ফসল। বন্যার পানি কমে গেলে ভাঙনের মুখে পড়ে তিস্তাপাড়ের মানুষ। প্রতিনিয়তই ভাঙছে তিস্তার বামতীরের বসতবাড়ি, আবাদি জমি আর স্থাপনা। চোখের সামনে ভেসে যাচ্ছে আসবাবপত্রসহ বাড়ির জিনিসপত্র। কান্নার রোল পড়েছে নদীপাড়ে।

বসত ভিটাহারা পরিবারগুলো ঘর ভেঙে নিয়ে সড়কের ধারে বা বাঁধের পাশে রেখেছেন। নতুন করে মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো। সরকারী ভাবে সহায়তা করতে তালিকা করা হলেও তা এখন পর্যন্ত সহায়তা দেয়া হয়নি। এরই মধ্যে প্রতি মুহুর্তে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে।

সব থেকে বেশি ভাঙনের মুখে পড়েছে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের সলেডি স্প্যার বাঁধ ২ এর ভাটিতে থাকা গোবর্দ্ধন ও গরিবুল্লাটারী গ্রামে। সোমবার(২৮ আগস্ট) দিনগত রাত ৩টায় ওই স্প্যার বাঁধ সংলগ্ন ভাটিতে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। গ্রামবাসী ঘুম থেকে উঠেই ৩টি বাড়ি অন্যত্র সড়িয়ে নেন। ভাঙনের মুখে পড়ে শত শত পরিবার মসজিদসহ স্থাপনা। দ্রুত ভাঙন রোধ করা না গেলে সলেডি স্প্যার বাঁধটিও বিলিনের শ্বঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

গত সোমবার রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন রবিউল, ভুট্টু ও ইয়াকুব আলীর পরিবার। ভোর না হতেই বসত ভিটা বিলিন হলো তাদের। মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলেনি এ ৩ পরিবারের। খবর পেয়ে ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে যান আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) জি আর সারোয়া ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মফিজুল ইসলাম। এসময় ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তায় ও ভাঙন রোধে জরুরী ব্যবস্থা নেয়া আশ্বাস দেন ইউএনও।

জন্মলগ্ন থেকে খনন না করায় তলদেশ ভরাট হওয়া তিস্তা নদী খনন করে দুই তীরে স্থায়ী বাঁধ নির্মানের দাবি তিস্তাপাড়ের মানুষের। দীর্ঘ দিনের এ দাবি পুরনে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী এ আশ্বাস দ্রুত বাস্তবায়ন চান তিস্তাপাড়ের সম্বলহারা নিঃস্ব মানুষগুলো।

ভাঙনের শিকার রবিউল ইসলাম, ভুট্টু ও ইয়াকুব আলী বলেন, মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে ঘরবাড়ি খুলে নিয়ে রাস্তায় রেখেছি। চোখের সামনে অনেক জিনিস ভেসে গেছে। সন্তানদের নিয়ে সড়ে এসেছি। ভাঙন রোধ করা না গেলে স্প্যার বাঁধও বিলিন হবে। আমরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন চাই।

মহিষখোচা ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান বলেন, মাঝরাতে লোকজনকে ডেকে নিয়ে ৩টি বাড়ি সড়িয়ে নিয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনকে বলেও ভাঙনরোধে জরুরী ব্যবস্থা করতে পারি নি। তাদের দাবি জরুরী কাজের কোন বরাদ্ধ নেই। স্প্যার বাঁধ ২ এর ভাটির ভাঙন রোধে জরুরী ব্যবস্থা না নিলে বাঁধটিও ধ্বসে যাবে তিস্তায়। গেল ৭দিন প্রায় ২৪/২৫টি বাড়ি বিলিন হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনিল কুমার বলেন, পানি কমে যাওয়ায় বাম তীরের ৫/৭টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্প্যার বাঁধ ২ এর ভাটিতে যে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। তা পরিদর্শন করে ঊর্দ্ধতনদের জানানো হয়েছে। সেখান থেকে যা নির্দেশনা আসবে সে অনুযায়ী কাজ করা হবে। আপাত জরুরী ভাবে কয়েকটি পয়েন্টে ছোট ছোট কিছু কাজ চলমান রয়েছে।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) জিআর সারোয়ার ভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে বলেন, ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করা হচ্ছে। তাদেরকে সরকারী ভাবে সহায়তা করা হবে। একই সাথে স্প্যার বাঁধ রক্ষায় জরুরী ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীদের জানানো হয়েছে।

 
Electronic Paper