ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, প্রতারক আটক

কৌশিক বোস, দিনাজপুর
🕐 ৭:৪২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২৩

জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, প্রতারক আটক

দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভুয়া কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর স্ক্যানিং করে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশকারী মূল প্রতারক আনিকা তাসনিম সরকার তৃষা (৩২) ও তার কথিত স্বামী আব্দুল মান্নান ওরফে মান্না (৩৫) কে গ্রেপ্তার করেছে কোতয়ালী পুলিশ।

সোমবার বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে দিনাজপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই দুই প্রতারককে গ্রেফতারের সংবাদটি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ পিপিএম (বার)।

মূল নারী প্রতারক আনিকা তাসনিম সরকার তৃষা দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার কাটা পাড়া গ্রামের ফুলবাড়ী পৌরসভার সাবেক মেয়র শাহজাহান আলী সরকার পুতুর মেয়ে। অপর প্রতারক আব্দুল মান্নান ওরফে মান্না নাটোর জেলার সদরের জালালাবাদ গ্রামের চাঁদ মিয়ার ছেলে। এই প্রতারক চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারের কারা রক্ষী হিসাবে কর্মরত রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশ সুপার জানান, গত শনিবার তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে এই নারী প্রতারক আনিকা তাসনিম সরকার তৃষা ও তার কথিত স্বামী আব্দুল মান্নান ওরফে মান্নাকে দিনাজপুর পৌরসভার দক্ষিণ বালুবাড়ী এক ভাড়া বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ।

পুলিশ সুপার জানান, গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই নারী প্রতারক জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন লোককে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই নারী প্রতারক তার প্রতারণা কাজ সহজ করার জন্য আর আগেই আরোও দুটি বিয়ে করেছিল। এই নারী প্রতারককে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় একটি প্রতারণার মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর কিছুদিন জেলে ছিল। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর আবারও এ প্রতারণার কাজ শুরু করেছে।

পুলিশ সুপার জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) শেখ মোঃ জিন্নাহ আল মামুনের নেতৃত্বে কোতয়ালী অফিসার ইনচার্জ মোঃ তানভীরুল ইসলাম তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নিবিড় তদন্ত চালিয়ে দুই প্রতারককে গ্রেফতার করে।

এই প্রতারক নারী তার কথিত স্বামী গ্রেফতারের সময় তার সাথে থাকা ভুয়া নিয়োগ পত্রের মাধ্যমে যোগদানকৃত তিনটি খাম। প্রজ্ঞাপন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর এর নিয়োগপ্রাপ্ত ও নিয়োগ পত্র আদেশের দুটি কপি। নিয়োগ পত্রের প্রজ্ঞাপন তিন পাতা নিকাহনামা সহ বিভিন্ন কাগজ ৬ পাতা। বিভিন্ন জনের ভোটার আইডি কার্ড তিনটি। জাল জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত ছয়টি সিম কার্ড। পাসপোর্ট দুটি। মোবাইল ফোন ৬টি। নগদ ৪০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। এফজেড মোটর সাইকেল যাহার রেজিষ্ট্রেশন নম্বার (নাটোর ল -১১-৫১১৩) জব্দ করা হয়েছে।

তিনি আরোও জানান এই নারী প্রতারক দিনাজপুর পঞ্চগড় ঠাকুরগাঁ ও ঢাকা, নাটোর, ঝিনাইদহ বিভিন্ন স্থানের বেকার যুবক যুবতীদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ইতিমধ্যে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই নারী প্রতারক গ্রেফতারের সংবাদ ছড়িয়ে পরায় কয়েকজন দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চাকরি প্রার্থী যারা টাকা দিয়েছে তারা জড়ো হয়েছে। এই প্রতারক নারীর দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবি করেন বিভিন্ন প্রতারনার শিকার প্রাথীরা।

দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ে এই নারী প্রতারক দ্বারা প্রতারিত হওয়া শারমিন সুলতানা তনু বলেন, তার বাড়ী দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলায় তাকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে এবং ভুয়া নিয়োগ পত্র প্রদান করে প্রায় ১২ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই নারী প্রতারক। হাকিমপুর উপজেলার স্টেশন ডাঙ্গাপাড়া প্রাইমারি স্কুলে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। ১১ মাস বেতনও দেয় বিকাশের মাধ্যমে। কিন্তু ২০২০ সালে ভয়াবহ করোনা চলাকালীন স্কুলে যোগদান করতে পারেনি। এই সুযোগ নিয়ে তনুর দেবর, ভাই আত্মীয় স্বজন সহ প্রায় ১৫ জনের কাছ থেকে চাকুরীর নাম করে প্রায় ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। যার দায়ভার এখন তনুর উপর।
একইভাবে প্রতারিত হওয়া রাকিবুল ইসলাম বলেন, চাকরি দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই নারী প্রতারক।

পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার কোকিলা ডাঙ্গা গ্রামের শাহ আলমের কন্যা সম্পা (১৮) জানান, দিনাজপুর জর্জ কোর্টে জারিকারকের চাকুরি দেয়ার নাম করে ৫ লাখ টাকা নিয়েছে। হাসিনা বানু বলেন তার মেয়েকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকেও ৭ লাখ টাকা গ্রহণ করেছে এই নারী প্রতারক।

বিভিন্নভাবেই খুঁজে পাওয়া না যাওয়ার অবশেষে পুলিশের সহযোগিতায় এই নারী প্রতারককে গ্রেফতার করা সংবাদ শুনেও তিনি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়েছি ।

উল্লেখ্য যে গত ১৫ ই জানুয়ারী ২০২৩ তারিখে জাতীয় ‘ দৈনিক মানবকন্ঠ‘ ও স্থানীয় দৈনিক খবর একদিন পত্রিকায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, দিনাজপুর এর ৫টি পদে ৫০ জন কর্মচারী নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় । মুলত: অজ্ঞাত প্রতারক চক্র জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, দিনাজপুর এবং জেলা প্রশাসক, দিনাজপুর এর নাম ও স্ক্যানকৃত স্বাক্ষর ব্যবহার করে কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত মিথ্যা ও বানোয়াট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য জেলা প্রতিনিধির নিকট প্রেরণ করেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া-বানোয়াট এবং প্রতারক চক্র তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার নিমিত্ত পত্রিকায় প্রকাশের জন্য প্রেরণ করে।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি জেলা প্রশাসকের দৃষ্টিগোচর হলে দৈনিক মানবকন্ঠ এর দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধিকে জানান যে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য কোন পত্র বা বিজ্ঞপ্তি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রেরণ করা হয় নাই। পরে দৈনিক মানকন্ঠের প্রতিনিধি বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেন।

 

 
Electronic Paper