একাত্তরের গণহত্যার সাক্ষী ঠাটমারী বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ
সরকার অরুণ যদু, রাজারহাট
🕐 ৪:৫২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৫, ২০২২
আগামীকাল ৬ ডিসেম্বর রাজারহাট হানাদার মুক্ত দিবস। রাজারহাটের ঠাটমারীতে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় শতশত মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল ।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষকদের সূত্রে জানা গেছে , ১৯৭১ ইং সনে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর পাক বাহিনী রাজারহাট-কুড়িগ্রাম সড়কের পার্শ্বে ঠাটমারীতে ক্যাম্প গড়ে তোলেন। এখান থেকে রাজাকার ও তাদের সহযোগীদের মাধ্যমে পরিকল্পনা মাফিক বিভিন্ন স্থানে সাধারন মানুষের ঘর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, নরহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটসহ নানা বর্বরোচিত কর্মকান্ড পরিচালনা করেন হানাদার-পাকবাহিনী।
যুদ্ধ চলাকালীন প্রায় দিন কোন না কোন স্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সাধারণ মানুষদের ধরে এনে নানাভাবে নির্যাতন শেষে গুলি করে হত্যা করত। এভাবে কত মানুষকে হত্যা করে লাশ পার্শ্বের ব্রীজের নীচে পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে এর সঠিক পরিসংখ্যান কেউ জানেন না। তবে পানির স্রোতে অগণিত মানুষের লাশ ভেসে যেতে দেখেছেন এলাকাবাসী। মুক্তিযুদ্ধে ১১জন মুক্তিযোদ্ধাকে ওই স্থানে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসব শহীদের রেকর্ড রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও সরকারী হিসেবে।
পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর নানা অপকর্মের সাক্ষী ঠাটমারী বধ্যভূমি। মহান মুক্তিযুদ্ধে নানা বেদনা বিধুর ও স্মৃতি বিজড়িত ঘটনার সাথে জড়িয়ে রয়েছে এটি। শহীদদের সম্মানার্থে ২০০৬ সালে সরকারি অর্থায়নে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঠাটমারী বধ্যভূমিতে গড়ে উঠে স্মৃতিস্তম্ভ। বিজয়ের মাস আসলে কথা আসে ঠাটমারী বধ্যভূমির। এসব লোমহর্ষক ঘটনা যারা জানেন এখনো মনে তারা পড়লে শিহরে উঠেন।
রাজারহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার বড় ভাই শহিদ প্রকৌশলী আজিজুল হককে ৭১ সনের ৭ই আগষ্ট মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ঠাটমারী বধ্যভূমিতে নির্মমভাবে হত্যা করে পানিতে ফেলে দিয়েছিল পাক বাহিনী। পরদিন এলাকাবাসী সেখান থেকে লাশটি নিয়ে এসে নিজ বাড়ির উঠানে দাফন করেন। এর আগে পাক বাহিনী ও রাজাকাররা একাধিকবার তাদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছিল বলেও জানান ।
ঠাটমারী থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে তৎকালীন আওয়ামী লীগের কুড়িগ্রাম মহকুমা সভাপতি আহম্মদ হোসেন সরকারের টগরাইহাট গ্রামের বাড়িতে অস্ত্র ও গোলা বারুদ মজুদ করা হয়। এরপর ওই বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শেষে প্রথমে পুলিশ, আনসার ও স্থানীয় যুবক-ছাত্রদের সমন্বয়ে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়। তারা সক্রিয় হয়ে উঠলে তাদের প্রতিরোধের মুখে শেষ অবধি হানাদার বাহিনী পিছু হঠতে শুরু করে।
রাজারহাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রজব আলী জানান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন শেষ পর্যায়ে বাংলার মুক্তিকামী দামাল ছেলেদের প্রতিরোধের মুখে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী রাজারহাট ছেড়ে পালিয়ে যায়। ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ইং সনে রাজারহাট হানাদার মুক্ত হয়। প্রতি বছর হানাদার মুক্ত দিবসে রাজারহাট ঠাটমারী বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।