ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

চরাঞ্চল নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, বিপৎসীমাও অতিক্রম

সুজন মাহমুদ, রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম)
🕐 ২:৩১ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২২

চরাঞ্চল নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, বিপৎসীমাও অতিক্রম

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে রাজীবপুরের ব্রহ্মপুত্র ও সোনাভরি নদীতে আশঙ্কাজনক হারে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। এতে করে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এদিকে, নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে তীব্র স্রোতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে ঘর-বাড়ি, বসতভিটাসহ নানা স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোতে অতিদ্রুত ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জোরদাবি জানিয়েছেন ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো।

এদিকে ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার বিস্তীর্ন চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।বসতবাড়ীতে উঠতে শুরু করেছে বন্যার পানি।এছাড়া শতশত একর জমির পাট,তিল,কাউন,বাদাম,শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল পানির নিচে চলে যাচ্ছে। এতে করে চরম আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। অপরদিকে গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ। সংকট দেখা দিয়েছে খাদ্য, পশুখাদ্য, ও বিশুদ্ধ পানির।

শনিবার (১৮ জুন) ব্রহ্মপুত্র ও সোনাভরি নদের বিভিন্ন বিস্তীর্ন চরাঞ্চলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কোদালকাটি ইউনিয়নের চর সাজাই, পাইকান্টারী পাড়া, পাখিউড়া,আনন্দবাজার শংকর মাধবপুর, মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের ভেলামারী, বড়বের, কীর্তনটারী, নাওশালা, শিকারপুর, চরনেওয়াজী, নয়াচরসহ প্রায় সবগুলো এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। এছাড়াও রাজীবপুর সদর ইউনিয়নের বালিয়ামারী, ব্যাপারীপাড়া, মিয়াপাড়া, বাউলপাড়া সপ্তাহ খানেক আগে প্লাবিত হলেও মদনেরচর, বদরপুর, মেম্বরপাড়া, মুন্সিপাড়া, করাতিপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় তীব্র স্রোতে পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে আরও নতুন নতুন গ্রাম।

কোদালকাটি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের শংকর মাধবপুর বিলপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ আলী ও আমেলা দম্পত্তির বাড়ীতে গিয়ে দেখা গেছে একটিমাত্র থাকার ঝুপরি ঘরের ভিতর পানি প্রবেশ করায় রান্না করার চুলাটিও ভিজে গেছে। রান্নার অভাবে সারাদিন খাবারও জোটেনি তাদের ভাগ্যে। অসহায় দম্পত্তি সাংবাদিককে জানান, “ঘরে পানি আইছে, জিনিস-পাতি ওই টিলায় সরাইতি সারাদিন গেল। আমগোরে রান্দনের চুলা ভিজা গেছে, চাইল-ডাইল নাই, খাবার পামু কনে? আল্লাই ভরসা।”

একই এলাকার পার্শ্ববর্তী বাড়ীর খলিলুর রহমান জানান, “এক বছরও হয় নাই এই বাড়ীত আইছি। এবার আবার নদী ভাইঙ্গা ঘর ভাঙ্গতেছি। যাওনের আর জাগা-জমি নাই। সরকার কত মাইনষেক ঘর দেয়। আমরা পাইলাম না।”

বন্যা পরিস্থিতি বিষয়ে কোদালকাটি ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ছক্কু জানান, “এবছর আমাদের এলাকায় বৃষ্টি বেশি পরিমাণে হওয়ায় সাধারণ চরাঞ্চলে কৃষকের ধানসহ সব রকম ফসল পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন পানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে বন্যা ভয়াবহ আকার নিতে পারে। সরকারীভাবে এখনও কোন ত্রাণ-সামগ্রী হাতে পাই নি।”

রাজীবপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান মিরন মোঃ ইরিয়াস জানান, “সরকারী অনুদানের পাশাপাশি সমাজে যারা বিত্তবান আছেন সকলেই যার যার সামর্থ অনুযায়ী অসহায় পরিবারগুলোর পাশে দাড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।”

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিত চক্রবর্তী জানান, “বন্যা ও নদী ভাঙ্গন এই অঞ্চলের প্রধান সমস্যা। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রশাসনিকভাবে সাময়িক প্রস্তুতি নিয়েছি। অতি দ্রুত দুর্গম এলাকায় অসহায়দের জন্য কিছু ত্রাণ সামগ্রী, শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি পৌছে দেয়া হবে।”

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “আগামী ৪৮ঘন্টা পর্যন্ত উজানে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে আগামী কয়েকদিন জেলার কয়েকটি নদীতে পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এখন পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।”

 
Electronic Paper