স্ক্র্যাচ কার্ড বিক্রি
প্রতারক চক্রের খপ্পরে হতদরিদ্ররা
ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি
🕐 ৬:৩৮ অপরাহ্ণ, জুন ০৮, ২০২২
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ২শ টাকায় স্ক্র্যাচ কার্ডের মাধ্যমে আকর্ষণীয় পুরস্কার দেবার প্রলোভন দেখিয়ে অভিনব কায়দায় প্রতারণার খেলায় নেমেছে নিউ ডিজিটাল মার্কেটিং কনসেপ্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এমন বিজ্ঞাপনে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে অসহায় পরিবারগুলো। প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মীরা বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে এলাকার হতদরিদ্র পরিবারের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সচেতন মহল বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নতুন কৌশলে কাজ করছে চক্রটি। বেশির ভাগ এই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন এলাকার মধ্যবিত্তরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট চক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে তারা আরও সক্রিয় হয়ে ওঠবে। জানা গেছে, নিউ ডিজিটাল মার্কেটিং কনসেপ্ট নামের প্রতিষ্ঠানটি চাটমোহর উপজেলার ছোট শালিখা হাড়ান মোড় এলাকায় অফিস ভাড়া নিয়ে এ প্রতারণার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। তাদের রয়েছে একদল বিক্রয়কর্মী। এই কর্মীরা বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলে গিয়ে হতদরিদ্র পরিবারকে লোভনীয় অফারের ফাঁদে ফেলে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের লটারীর মাধ্যমে মার্কেটিং কার্যক্রম।
কার্ডে গায়ে উল্লেখ রয়েছে, ২০০ টাকায় স্ক্র্যাচ কার্ড কিনলে হবেন সদস্য। কার্ডের সামনে রয়েছে, ১২ সেফটি ওয়ালটন ফ্রিজ, ৩২ ইঞ্চি এলইডি টিভি, ল্যাব টপ, স্যামসাং অ্যান্ড্রয়েড এম৫১ মোবাইল ফোন, ৩৩ লিটার ইলেকট্রনিক ওভেন ও ওয়াশিং মেশিনের ছবি। কার্ডের পিছনে গায়ে রয়েছে তার উল্টো। সেখানে অপশন আইটেমের মধ্যে রয়েছে, ১৯, ২০ ও ২২ ইঞ্চি এলইডি টিভি, ইলেকট্রনিক ওভেন ও ফ্যামেলী প্যাকেজ ৫টি। পরবর্তীতে স্ক্র্যাচ কার্ড ঘষলেই পণ্যের নাম ভেসে উঠবে। এই পণ্য অফিসে গিয়ে ৬৫০০ টাকায় উত্তোলন করতে হবে। কার্ড ঘষে পণ্যের নাম না আসলে ৪০০ টাকা ফেরত পাবে তিনি। যদি কোন সদস্য দুটি কার্ড সংগ্রহ করে তাহলে তিনি ৫ অপশন আইটেম পাবেন। এই কার্ডের মেয়াদ ৩০দিন। পণ্য নেওয়ার জন্য গ্রাহককে অফিসে আসলে হবে। কার্ড স্ক্র্যাচ করার মাধ্যমে কি পেয়েছেন তা মার্কেটিং অফিসারকে জানিয়ে নথিভুক্ত করতে হবে। প্রোডাক্টের বিনিময়ে কোনভাবেই টাকা ফেরত হবে না। মার্কেটিং প্রচারপত্রে হেড অফিসের ঠিকানা লেখা রয়েছে পল্টন, ঢাকা-১০০০।
ভাঙ্গুড়ার কৈডাঙ্গা গ্রামের আতাউর রহমান বলেন, ৬০০ টাকা দিয়ে তিনি ৩টি স্ক্র্যাচ কার্ড কিনে ল্যাপটপ, ২২ ইঞ্চি এলইডি টিভি ও ৫টি ফ্যামেলী প্যাকেজের লেখা ওঠে। কিন্তু তারা এখনও কিছুই দেয়নি। আরেক ক্রেতা আঃ রহিম বলেন, ২০০ টাকায় একটি কার্ড কিনে ঘষে দেখি ২২ ইঞ্চি এলইডি টিভি লেখা রয়েছে। কিন্তু তারা সেটি আনার কথা বলে না আনায় থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদের কার্ড বিক্রি বন্ধ করে দেন। আদৌও টিভি পাবো কিনা জানি না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অফিসে পণ্য নিতে গিয়ে দেখি সব কিছুই নিম্নমানের। তবে স্ক্র্যাচ কার্ডের গায়ে দেওয়া দামি দামি পণ্যের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। অনেকেই স্ক্র্যাচকার্ড কেনার পর নিম্নমানের পণ্য হওয়ায় তারা হতাশ হয়ে চলে গেছেন। ফলে এই চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। কার্ডে থাকা ০১৩২৪৯৭৬৪৯৩ নম্বরে যোগাযোগ করে কার্ড বিক্রয়ের অনুমতি বিষয়ে জানতে চাইলে এক মার্কেটিং অফিসার সংবাদকর্মীকে চাটমোহর অফিসে গিয়ে দেখা করতে বলেন।
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার (ওসি) মুঃ ফয়সাল বিন আহসান বলেন, বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে কার্ড বিক্রি বন্ধ করা হয়। অভিযোগ না থাকায় তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, স্ক্র্যাচ কার্ড দিয়ে ব্যবসার নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে থাকলে খোঁজ খবর নিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।